জনবহুল আমাদের এ দেশ। জনসংখ্যা বাড়ছে। সাথে বাড়ছে নানা সমস্যা। বাড়ছে বেকার
সমস্যা। বাড়ছে অনৈতিক কর্মকান্ডও। দেশে অভাবের সীমা নেই, কিন্তু সম্পদ
সীমিত। সরকারের একার পক্ষেও সম্ভব নয় এতসব অভাব মেটানো। তাহলে উপায়?
কর্মসংস্থানের অভাবে দুরদর্শী ও বুদ্ধিমান লোকেরা বেছে নিচ্ছেন কিছু বিকল্প
ব্যবস্থা। অনেকেই চাকরির পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য ঝুঁকে পড়ছেন শেয়ার
ব্যবসায়, নানাধর্মী বিপণন, আত্মকর্মসংস্থানমূলক নানা কাজে ও আউটসোর্সিংয়ে।
সবগুলোর মাঝে শেয়ার ব্যবসায়ের জনপ্রিয়তা বেশি, কারণ এতে শ্রম কম, কিন্তু আয়
করার সুযোগ বেশি। কিছু অসাধু লোকের জন্য শেয়ার বাজারেও দেখা দিয়েছে মন্দা।
আজকের এ আয়োজনে উদ্যোগী মানুষের জন্য একটি সুসংবাদ রয়েছে। সুসংবাদটি হচ্ছে
দেশীয় শেয়ার বাজার থেকে বড়, অথচ কম ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের একটি স্থান
রয়েছে। এর নাম ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রেডিং বা সংক্ষেপে ফরেক্স। আমাদের দেশে
ধীরে ধীরে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন এ বাজার নিয়েই এ প্রচ্ছদ প্রতিবেদন।
এতে ফরেক্স কী, কিভাবে এ ব্যবসায়ে জড়িত হবেন, ফরেক্সের সুবিধা ও অসুবিধা
কী, ফরেক্স মার্কেটের বিস্তারিত ব্যবসায়সংশ্লিষ্ট কিছু শব্দের ব্যাখ্যাসহ
ফরেক্সের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
ফরেক্স শব্দটি আমাদের দেশে নতুনই বলা চলে। বাংলাদেশে এ নিয়ে তেমন একটা কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়নি। তবে সবার কাছে শিগগিরই তা যে এক আলোড়নের জন্ম দেবে, তা বোঝা যাচ্ছে বাংলা ওয়েবসাইট ও ব্লগগুলোতে ফরেক্সে চর্চার প্রচার ও প্রসার দেখে। আমাদের দেশ বরাবরের মতোই অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে। ফরেক্সের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। এশিয়ার কিছু দেশ যেখানে ফরেক্স মার্কেটের বেশ প্রসার ঘটিয়েছে, সেখানে আমরা মাত্র হাঁটি হাঁটি পা পা করে এ পথে এগুচ্ছি। পৃথিবীর মুদ্রা কেনাবেচার সবচেয়ে বড় বাজার ফরেক্সে বিচরণ করার জন্য এ কাজকে ভালো করে জানতে-চিনতে হবে। টাকা কামানোর সহজ কোনো পদ্ধতি নেই। শুধু শ্রম, অভিজ্ঞতা বা মেধার একক ব্যবহার করে টাকা কামানোর চিন্তা করা বোকামি। বড় ব্যবসায়ীরা শুধু শ্রম নয়, এর সাথে তাদের মেধা ও অভিজ্ঞতার বিশাল ভান্ডারের সমন্বয় করতে পেরেছেন বলেই এরা আজ এতটা সফল হতে পেরেছেন। তাই ফরেক্সের জগতে আসার আগে কিছু প্রস্ত্ততির প্রয়োজন। এখানে ফরেক্সের সাধারণ কিছু দিক তুলে ধরা হলো, যাতে ফরেক্স সম্পর্কে পাঠক সাধারণের কিছুটা ধারণা হয়। আশা করা যায়, ফরেক্সের জগতে বিচরণের জন্য কী কী বিষয়ে জানতে হবে, তার একটি সংক্ষিপ্ত গাইডলাইন পাঠকেরা পেয়ে যাবেন।
ফরেক্স কী?
ফরেন কারেন্সি এক্সচেঞ্জ মার্কেটকে সংক্ষেপে ফরেক্স (ForeX) বা এফএক্স (FX) বা কারেন্সি মার্কেট বলা হয়। একে স্পট ফরেক্স বা রিটেইল ফরেক্সও বলা হয়। শেয়ার মার্কেটে কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা হয়। কিন্তু ফরেক্সের বাজারে বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচা করা হয়। এখানে আপনি একটি দেশের মুদ্রা বিক্রি করে আরেক দেশের মুদ্রা কিনতে পারবেন। আমেরিকার মুদ্রা ডলার এবং ব্রিটেনের মুদ্রা পাউন্ড। ফরেক্স মার্কেটে আপনি ডলার বিক্রি করে পাউন্ড কিনতে পারবেন বা পাউন্ড বিক্রি করে ডলার কিনতে পারবেন।
একটি উদাহরণ দিলে ব্যাপারটি আরো স্পষ্ট হবে। ধরুন, আপনি ফ্রান্সে বেড়াতে গেলেন। সেখানে যাওয়ার পর কিছু কেনার প্রয়োজন হলো। আপনার কাছে আছে মার্কিন ডলার। আপনি যদি দোকানিকে ডলার দেন, তবে সে তা নেবে না। সে চাইবে ইউরো। তাই আপনাকে আগে ডলারের বিনিময়ে সংগ্রহ করতে হবে ইউরো বা ইউরোপীয় দেশের মুদ্রা ফ্রাঙ্ক । মানি এক্সচেঞ্জ করার জন্য আপনাকে সাহায্য নিতে হবে মানি এক্সচেঞ্জারের। তার কাছে ১০০ ডলার দিয়ে আপনি পেলেন ৭০ ইউরো। এখানে আপনি ইউরো কিনেছেন, মার্কিন ডলার বিক্রি করেছেন।
ফরেক্স মার্কেট
পৃথিবীর অন্যতম একটি শেয়ার বাজার হচ্ছে নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ। প্রতিদিন প্রায় ৭৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের লেনদেন হয় এ বাজারে। অর্থের পরিমাণ কী বেশি বড় মনে হচ্ছে? ফরেক্স মার্কেটের তুলনায় তা অতি নগণ্য। ফরেক্স মার্কেটে দিনে প্রায় ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সমান অর্থের লেনদেন হয়। ফরেক্সের এমন কোনো প্রতিষ্ঠান বা সেন্টার নেই, যে এককভাবে এত বড় অর্থের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে বা বিপুল অর্থের বিনিময় দেখাশোনা করে। প্রধানত বড় বড় ব্যাংক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্রোকারদের মাঝে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশাল এ বাজারে অর্থের বিনিময় হয়ে থাকে। ফরেক্স আগে বিভিন্ন দেশের বড় বড় ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, সাধারণ মানুষের প্রবেশ ছিল না এ জগতে। কিন্তু প্রযুক্তির কল্যাণে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হয়ে যাওয়ায় ছোট ব্যবসায়ীদের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছেছে ফরেক্স। অনলাইনে ইন্টারনেট কানেকশনের সাহায্যে খুব সহজেই যেকেউ প্রবেশ করতে পারেন এ বিশাল মুদ্রা বাজারে। সাধারণ মানুষ এ বাজারে অংশ নেয়ার পর থেকে এ বাজারের পরিধি আরো বিস্তৃত হয়েছে।
নিচে ফরেক্স মার্কেট (FX), নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ (NYSE), টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জ (TSE) ও লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ (LSE)-এর মধ্যে গড় বেচাকেনার পরিমাণের একটি উদাহরণ গ্রাফের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো। এটি ২০১০ সালের অক্টোবর মাসের বাজারের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
গ্রাফটি বা লেখচিত্রটি থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০১০ সালে ফরেক্স মার্কেটের গড় বেচাকেনার পরিমাণ তথা অ্যাভারেজ ট্রেডিং ভলিউম ছিল ৩৯৮০০০ কোটি ডলার, নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের ৭৪০০ কোটি ডলার, টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জের ১৮০০ কোটি ডলার ও লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের ৭০০ কোটি ডলার। ফরেক্স মার্কেট নিউইয়র্ক, টোকিও ও লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ মার্কেটের চেয়ে যথাক্রমে ৫৩, ২২১ ও ৫৬৮ গুণ বড়। প্রায় ৪X১০১২ মার্কিন ডলার মূল্যের এ বিশাল বাজারে রিটেইল ট্রেডার বা খুচরো ব্যবসায়ী আমরা। আমরা যারা এখানে ছোটখাটো বিনিয়োগ করব তাদের অর্থের পরিমাণ প্রায় ১.৪৯ ট্রিলিয়ন ডলার। আকার দেখেই বুঝতে পারছেন কত বড় একটি মার্কেটে আপনি বিচরণ করার সুযোগ পাচ্ছেন।
কী বেচাকেনা হয় ফরেক্স মার্কেটে?
এতক্ষণে সবাই জেনে গেছেন ফরেক্স মার্কেটে লেনদেন হয় বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু শুধু কি বিদেশী মুদ্রাই বেচাকেনা হয় এ বাজারে? মুদ্রা ছাড়াও সোনা, রূপা ও তেলের বেচাকেনা হয় এ ফরেক্স মার্কেটে। তবে এগুলোর দামের তারতম্য খুব একটা বেশি হয় না। তাই দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয় মুদ্রা ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যম বেছে নিলে। সবার নজর মুদ্রা লেনদেনের দিকেই বেশি। কারণ, মুদ্রার বাজারে দামের ওঠানামা চলে বেশি। কোনো দেশের মুদ্রা কেনার অর্থ সে দেশের অর্থনীতির একটা শেয়ার কিনলেন আপনি। সে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হলে এবং উন্নতির দিকে গেলে আপনার লাভ হবে বেশি। আর সে দেশের অর্থনীতিতে ধস নামলে আপনার ক্ষতি। তাই অর্থনীতিবিদদের ভাষায় বলতে গেলে বলা লাগে : The eXchange rate of a currency versus other currencies is a reflection of the condition of that country’s economy, compared to other countries’ economies ।
ফরেক্স মার্কেটের প্রধান মুদ্রাগুলো
শক্তিশালী কিছু মুদ্রার বেচাকেনা বেশি হয় ফরেক্স মার্কেটে। এ শক্তিশালী কারেন্সি বা মুদ্রাগুলোকে বলা হয় মেজর কারেন্সি বা প্রধান মুদ্রা। যেমন : যুক্তরাষ্ট্রের ডলার, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইউরো, ব্রিটেনের পাউন্ড, কানাডার ডলার, অস্ট্রেলিয়ার ডলার ইত্যাদি।
কারেন্সি সিম্বল বা মুদ্রা সঙ্কেতে তিনটি অক্ষর থাকে। প্রথম দুটি দেশের নাম ও শেষেরটি সে দেশের মুদ্রার নামের প্রথম অক্ষর প্রকাশ করে। যেমন : USD হচ্ছে মার্কিন ডলারের সঙ্কেত। এখানে US দিয়ে United States এবং D দিয়ে Doller বোঝাচ্ছে। একইভাবে বাংলাদেশের সংক্ষিপ্ত নাম BD, কারেন্সি হচ্ছে Taka আর আমাদের দেশীয় মুদ্রার সঙ্কেত হচ্ছে BDT। মজার ব্যাপার হচ্ছে ডলারের আরো অনেক নাম রয়েছে, যেমন : greenbacks, bones, benjis, benjamins, cheddar, paper, loot, scrilla, cheese, bread, moolah, dead presidents Ges cash money। এছাড়াও পেরুতে ডলারের নিকনেম বা ডাকনাম হচ্ছে কোকো।
কারেন্সি পেয়ার
ফরেক্সে একটি মুদ্রা কেনা হয় আরেকটি বেচা হয়। তাই এখানে দুটি মুদ্রার কারবার হচ্ছে। মুদ্রার এ বেচাকেনার কাজ করবে ব্রোকার বা ডিলার, একটি মুদ্রাজোড়ের বা কারেন্সি পেয়ারের ওপর ভিত্তি করে। ব্যাপারটা আরেকটু ব্যাখ্যা করা যাক, শেয়ার মার্কেটের নিয়ম হচ্ছে যেকোনো শেয়ারের মূল্য সে দেশের মুদ্রার বিপরীতে নির্ধারিত হবে। যেমন- বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেটে কোনো শেয়ারের মূল্য ধরা হয় টাকায়। কিন্তু ফরেক্স মার্কেটে এভাবে কোনো দেশের মুদ্রা বা কারেন্সির মান নির্ধারণ অসম্ভব। শুধু ইউরো বা ডলারের কোনো মূল্য থাকতে পারে না। যেমন- ১ ডলার দিয়ে ৭৪ বাংলাদেশী টাকা পাওয়া যায়। একইভাবে ১ ডলার দিয়ে মাত্র ০.৬৯ ইউরো অথবা ০.৬১ ব্রিটিশ পাউন্ড পাওয়া সম্ভব। আবার যদি ভারতের রুপির কথা ধরা হয়, তাহলে ১ ডলার দিয়ে আপনি ৪৫ রুপি পাবেন। তাহলে ডলারের মূল্য আসলে কোনটি? বিভিন্ন দেশের মানুষই তো ফরেক্স মার্কেটে ট্রেড করে, কোন দামে তারা ডলার কিনবে? এ জন্যই ফরেক্স মার্কেটে সবকিছু কারেন্সি পেয়ারের মাধ্যমে ট্রেড হয়। মার্কিন ডলার ও ইউরোর মুদ্রাজোড় হচ্ছে USD/EUR এবং ব্রিটিশ পাউন্ড ও জাপানি ইয়েনের জোড় হচ্ছে GBP/JPY।
ফরেক্সের বাজারে তাই মুদ্রাজোড়ের ভূমিকা অনেক এবং বেচাকেনার সময় যেকোনো জোড়কে বেছে নিতে পারেন। মুদ্রার মাঝে এ প্রতিযোগিতাকে টাগ অব ওয়ারের সাথে তুলনা করতে পারেন। যে কারেন্সি যত বেশি শক্তিশালী হবে অপর পক্ষের কারেন্সি তত দুর্বল।
ফরেক্সে কারেন্সির এ জোড়কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
এগুলো হচ্ছে :
০১. প্রধান মুদ্রাজোড় (মেজর কারেন্সি পেয়ার);
০২. গৌণ মুদ্রাজোড় (মাইনর/ক্রস-কারেন্সি পেয়ার);
০৩. এক্সোটিক মুদ্রাজোড় (এক্সোটিক পেয়ার)।
প্রধান মুদ্রাজোড় :
প্রধান মুদ্রাজোড়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাতে মার্কিন ডলারের উপস্থিতি। মার্কিন ডলারের সাথে অন্যান্য বহুল ব্যবহৃত শক্তিশালী মুদ্রাজোড়কেই বলা হয় প্রধান মুদ্রাজোড়। এখানে প্রধান কারেন্সি পেয়ারগুলোর নাম, দেশ ও ফরেক্সের ভাষায় তাদের নাম তালিকাভুক্ত করা হলো-
গৌণ মুদ্রাজোড় :
মার্কিন ডলার বাদে অন্যান্য প্রধান কারেন্সির মাঝে যে জোড় বা ক্রস হয় সেগুলোকে গৌণ বা অপ্রধান মুদ্রাজোড় বলে। ইংরেজিতে এদের ক্রস কারেন্সি পেয়ার বলা হয়। সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রস পেয়ারগুলো সাধারণত ইউরো, ব্রিটিশ পাউন্ড, জাপানি ইয়েনের মাঝে দেখা যায়। ইউরোকে প্রথমে বা বেস কারেন্সি হিসেবে রেখে তার সাথে অন্য কোনো মুদ্রার ক্রস করা হলে বা জোড়া বানানো হলে তাকে উইরো ক্রস বলে। এভাবেই ইয়েন ক্রস, পাউন্ড ক্রস ও অন্যান্য ক্রস হতে পারে। ইয়েন ক্রসের ক্ষেত্রে ইউরো/ইয়েন এবং পাউন্ড/ইয়েন মুদ্রাজোড়ের ডাকনাম যথাক্রমে ইয়ুপ্পি ও গুপ্পি। নিচের ছকে ইউরো ক্রসের উদাহরণ তুলে ধরা হলো-
এক্সোটিক পেয়ার :
এক্সোটিক পেয়ারের বেলায় একটি প্রধান কারেন্সির সাথে কম শক্তিশালী বা ধীরে ধীরে শক্তিশালী হতে থাকা কোনো কারেন্সির সাথে যে পেয়ার বা জোড় করা হয় তাকে এক্সোটিক পেয়ার বলে। কম শক্তিশালী কারেন্সির মধ্যে রয়েছে মেক্সিকোর পেসো, ডেনমার্কের ক্রোন, থাইল্যান্ডের বাথ, বাংলাদেশের টাকা, ভারতের রুপি ইত্যাদি। জোড় বানানোর ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় প্রধান কারেন্সি হিসেবে মার্কিন ডলার থাকে। এ ধরনের পেয়ার দিয়ে তেমন একটা ট্রেড হয় না। প্রধান কারেন্সি পেয়ার ও ক্রস পেয়ারগুলো নিয়েই বেশি মাতামাতি হয়ে থাকে। নিচে কিছু এক্সোটিক পেয়ারের উদাহরণ দেয়া হলো-
কারেন্সি ডিস্ট্রিবিউশন
ফরেক্স মার্কেটে লেনদেনে মুদ্রা হিসেবে মধ্যমণি হয়ে আছে মার্কিন ডলার। ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী ফরেক্স বাজারে ডলারের ট্রানজেকশন হয়েছে প্রায় ৮৪.৯%। এরপর দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ স্থানে ছিল যথাক্রমে ইউরো (৩৯.১%), ইয়েন (১৯.০%) ও পাউন্ড (১২.৯%)। নিচে একটি গ্রাফ দেয়া হলো, যাতে ফরেক্স মার্কেটের কারেন্সি ডিস্ট্রিবিউশনের সহজ একটি চিত্র দেয়া আছে।
কারেন্সির রাজা ডলার
ফরেক্স মার্কেটে ডলার আধিপত্য বিস্তার করে আছে শুরুর দিক থেকেই। বেশিরভাগ প্রধান কারেন্সি পেয়ারে ডলারের উপস্থিতি ডলারের আধিপত্যকে আরো শক্তিশালী করে তুলছে। ফরেক্স রিজার্ভে কারেন্সি কম্পোজিশনের কথা চিন্তা করলে ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী দেখা যায় ডলারের পরিমাণ ৬২%। তাই কারেন্সির রাজা হিসেবে ডলারকে অভিহিত করাই যায়। চিত্রটিতে চোখ বুলালেই কারেন্সি কম্পোজিশনে ফরেক্স রিজার্ভে বাকি কারেন্সিগুলোর অবস্থান জানা যাবে।
ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড বা আইএমএফের ভাষ্যমতে, পৃথিবীর অফিশিয়াল ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভের অর্ধেকের বেশি (প্রায় ৬২%) জুড়ে আছে মার্কিন ডলার। বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়িক কোম্পানি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবাই ডলারের সাহায্যে লেনদেন করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ফরেক্স মার্কেটে মার্কিন ডলারের মুখ্য ভূমিকা পালন করার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে : ০১. যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অর্থনীতি; ০২. মার্কিন ডলার পৃথিবীর সব দেশের রিজার্ভ কারেন্সি; ০৩. আমেরিকার রয়েছে সবচেয়ে বড় লিকুইড ফিনান্সিয়াল মার্কেট; ০৪. যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অবস্থা বেশ মজবুত; ০৫. মিলিটারি শক্তির দিক থেকেও আমেরিকার অবস্থান শীর্ষে; ০৬. মার্কিন ডলার বেশিরভাগ ব্যবসায়িক লেনদেনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন- বাংলাদেশ যদি কোনো আরব দেশের কাছ থেকে তেল কিনতে চায় তবে তা টাকা দিয়ে কেনা যাবে না। তেল কেনার জন্য টাকাকে ডলারে রূপান্তরিত করে নিতে হবে। অর্থাৎ টাকা বিক্রি করে ডলার কিনতে হবে, তারপর তা দিয়ে তেল কিনে নিতে হবে।
ফরেক্স করবেন কেন?
ফরেক্স ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য কী এবং কেনো ব্যবসায়ে নামবেন তা জেনে নেয়া যাক : ০১. এতে কোনো ক্লিয়ারিং ফি, এক্সচেঞ্জ ফি, সরকারি ফি এবং সর্বোপরি কোনোরকমের ব্রোকারেজ ফি দিতে হয় না; ০২. মার্কেটে লেনদেনের মাঝে কোনো মধ্যস্থতাকারী নেই; ০৩. লটের আকারের কোনো নির্দিষ্টতা নেই; ০৪. রিটেইল ট্রানজেকশন কস্ট বা বিড/আস্ক স্প্রেড সাধারণত বেশ কম, যা ০.১ শতাংশের নিচে থাকে। বড় ডিলারদের ক্ষেত্রে তা ০.০৭% পর্যন্ত হতে পারে; ০৫. সপ্তাহের ৫ দিনে ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে এ বাজার; ০৬. মার্কেট এত বড় যে, কোনো সেন্ট্রাল ব্যাংকেরও ক্ষমতা নেই ফরেক্স মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করার; ০৭. লেভারেজ বা লোন পাওয়ার সুবিধা; ০৮. বাজারে বেশ তারল্য বিদ্যমান; ০৯. নতুন ও কম পুঁজির ট্রেডারদের জন্য মাইক্রো ও মিনি ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন, যা ১ ডলার থেকে শুরু এবং ১০. অ্যাকাউন্ট খোলা, সফটওয়্যার, পরামর্শ ও সাহায্য সবকিছুই সহজলভ্য ও তার জন্য কোনো মূল্য দিতে হয় না।
ফরেক্স বনাম শেয়ার মার্কেট
নিউইয়র্ক স্টক মার্কেটের কথা চিন্তা করলে দেখা যায়, সেখানে স্টকের সংখ্যা সাড়ে ৪ হাজার। এত স্টকের ওপর নজর রাখা এবং সেগুলো নিয়ে সমীক্ষা চালিয়ে কতটা ঝামেলার কাজ, তা সহজেই অনুমেয়। ফরেক্স মার্কেটেও রয়েছে কয়েক ডজন কারেন্সি পেয়ার, কিন্তু বেশি লেনদেন হয়ে থাকে প্রধান কারেন্সি পেয়ারগুলোর মধ্যে। তাই ৪-৫টি প্রধান কারেন্সি পেয়ারের দিকে নজর রাখার ব্যাপারটা খুব যে কঠিন তা কিন্তু নয়। আসুন দেখা যাক, ফরেক্সের সাথে স্টক মার্কেটের পার্থক্য :
ছকে উল্লিখিত পার্থক্য দেখে ফরেক্সকেই এগিয়ে রাখতে হচ্ছে। কারণ, স্টক মার্কেটের তুলনায় ফরেক্স অনেক বড় ও অনেক বেশি সুবিধাজনক।
ফরেক্স মার্কেটের গঠন
স্টক মার্কেটের একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান থাকে। স্টক মার্কেট একটি কেন্দ্রায়িত বাজার। কিন্তু ফরেক্স মার্কেট বিকেন্দ্রায়িত বাজার। এর কোনো কেন্দ্রীয় বাজার নেই। ফরেক্স মার্কেট হায়ারাকি হচ্ছে- প্রধান ব্যাংকগুলো ইলেকট্রনিক ব্রোকিং সার্ভিসে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যাংকগুলো রিটেইল মার্কেট মেকারস এবং কমার্শিয়াল কোম্পানিগুলো রিটেইল ট্রেডারস। মার্কেটের খেলোয়াড় হিসেবে কাজ করে বড় আকারের ব্যাংকগুলো, কমার্শিয়াল কোম্পানি, সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং একক বিনিয়োগকারী।
ফরেক্সের ইতিহাস
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পশ্চিমা দেশের সরকারগুলো বৈশ্বিক অর্থনীতিতে স্থিরতা আনার প্রয়োজন উপলব্ধি করে। তখন ১৯৭১ সালের দিকে ব্রিটন উডস সিস্টেম চালু হয়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন কারেন্সির বদলে স্বর্ণ ব্যবহার করা হয় এক্সচেঞ্জ রেটের অস্থিরতা কমাতে। কিন্তু তাতে এক্সচেঞ্জ রেটের অস্থিরতা কমলেও ফেয়ার একচেঞ্জ রেট বের করাটা কঠিন হয়ে পড়ে। পরে কমপিউটার ও নেটওয়ার্কের উন্নতির ফলে ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব ট্রেডিং প্লাটফর্ম বানাতে শুরু করে। ১৯৯০ সাল থেকে অনেক ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান তাদের ট্রেডিং প্লাটফর্ম হিসেবে ইন্টারনেটকে বেছে নেয়। এরপর থেকেই শুরু ফরেক্সের যাত্রা। ফরেক্সের চর্চা অনেক দিন ধরেই হয়ে আসছে, কিন্তু আমাদের দেশে তা নতুনই বলা চলে। কারণ, অনেকেই এ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না।
ফরেক্স সম্পর্কিত কিছু পদবাচ্য
ফরেক্সে বেশ কিছু শব্দ বা পদবাচ্য রয়েছে, যার অর্থ নতুনদের জন্য বোঝা কঠিন। তাই ফরেক্সের সাথে যুক্ত শব্দগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে ফরেক্সে আসা উচিত নয়। ফরেক্স বোঝার জন্য এসব শব্দের গুরুত্ব অপরিসীম। ফরেক্সে অনেক টার্ম বা পদবাচ্য আছে, যা কাজ করতে করতে আপনি জানতে পারবেন। কিন্তু যে টার্ম বা শব্দগুলো জানা না থাকলেই নয়, সেগুলো নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
কারেন্সি পেয়ার :
কারেন্সি পেয়ার নিয়ে এখানে আগেই বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তবে এখানে সহজ কিছু উদাহরণের ব্যাপারটি আরো স্পষ্ট করে তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে। আগেই জেনেছি কারেন্সি পেয়ারগুলোকে কিভাবে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। যেমন : মার্কিন ডলার ও ইউরোর কারেন্সি পেয়ারের সঙ্কেত হচ্ছে USD/EUR। এখন যদি লেখা থাকে ১ USD/EUR = ০.৬৯৩০, তাহলে বুঝতে হবে ১ ডলার দিয়ে আপনি পাবেন ০.৬৯৩০ ইউরো। বিপরীতভাবে যদি লেখা থাকে ১ EUR/USD = ১.৪৪২৮, তাহলে বুঝতে হবে ১ ইউরো দিয়ে কেনা যাবে ১.৪৪২৮ ডলার।
পিপস :
ওপরের কারেন্সি পেয়ারের ব্যাখ্যায় কারেন্সি পেয়ার রেটের বেলায় দশমিকের পরে চার ঘর পর্যন্ত সংখ্যা রাখা হয়েছে। অনেকের মাথায় আসতে পারে এত সূক্ষ্ম করে লেখার কী দরকার? যারা শেয়ার ব্যবসায় করেন, তাদের প্রশ্ন হতে পারে শেয়ারের মূল্য সাধারণত পূর্ণ সংখ্যায় থাকে, যেমন : শেয়ারের মূল্য ৫০ টাকা হতে পারে বা ১০০০ টাকা হয়ে থাকে? খুব কমই শেয়ার দেখা যায় যার মূল্য দশমিক পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু ফরেক্সের বেলায় এত সূক্ষ্ম হিসাবের কী প্রয়োজন? এক্ষেত্রে বলা যায়, শেয়ার হচ্ছে দুটি কারেন্সির অনুপাত, তাই এখানে মুদ্রার মূল্যমানের সূক্ষ্ম পার্থক্যটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শেয়ার বাজারে আমরা এমনভাবে হিসাব করি না যে, গ্রামীণফোনের শেয়ারের বদলে কতগুলো এয়ারটেলের শেয়ার পাব। শেয়ার বাজারে শেয়ারের মূল্যাটাই আসল, যার দাম সাধারণত পূর্ণ সংখ্যায় হয়ে থাকে।
ফরেক্স মার্কেটে দশমিকের পর ৪ ঘর পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। কারণ কারেন্সি এক্সচেঞ্জ রেটের হেরফের বেশি লক্ষ করা যায় দশমিকের পরে তৃতীয় ও চতুর্থ ঘরে। কোনো দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার বড় কোনো পরিবর্তন না হলে দশমিকের পরে প্রথম ঘরের পরিবর্তন সাধারণত দেখা যায় না। ২-৩ দিন বা এক সপ্তাহের বাজার পর্যালোচনা করলে দশমিকের পরের দ্বিতীয় ঘরে পরিবর্তন দেখা যায়। পিপস সম্পর্কে বেশ ভালো জ্ঞান রাখা উচিত। তা না হলে ফরেক্স শেখাটা বেশ কঠিন হয়ে যাবে।
একটি সহজ উদাহরণ দেখা যাক, আগস্ট ২০১১ সালের ১১ তারিখ থেকে ১৮ তারিখ মোট ৮ দিনের হিসাব ডলার/ইউরো এক্সচেঞ্জ রেট নিচের ছকে দেয়া হলো :
এ ছক থেকে দেখা যাচ্ছে, ১১-১৪ তারিখ পর্যন্ত দশমিকের পরের তৃতীয় ও চতুর্থ ঘরে পরিবর্তন হয়েছে। ১৫ তারিখে এসে দশমিকের পরের ঘরে ৬ বেড়ে ৭-এর ঘরে গেছে এবং ১৫-১৮ তারিখ পর্যন্ত তা বহাল থেকেছে। ১৫-১৮ পর্যন্ত আবারো দশমিকের পরের তৃতীয় ও চতুর্থ ঘরেই মানের হেরফের হয়েছে। দশমিকের পরের চতুর্থ সংখ্যাটিকে বলা হয় পিপ (Pip)। অর্থাৎ ০.৬৯৮১ সংখ্যার মধ্যে ১ হচ্ছে পিপ। যেহেতু তৃতীয় ও চতুর্থ ঘরের মাঝে বেশি পরিবর্তন হয়ে থাকে, তাই এ দুটি সংখ্যাকে বেশি হিসাব করা হয়। তাই একসাথে এ দুটি সংখ্যাকে (আরো বেশি সংখ্যাও হতে পারে) বহুবচনে পিপস (Pips) বলা হয়। অর্থাৎ ০.৬৯৮১ সংখ্যাতে পিপস হচ্ছে ৮১ বা ৯৮১ বা ৬৯৮১।
আমরা ১৭ ও ১৮ তারিখের এক্সচেঞ্জ রেটের মধ্যে পার্থক্য করলে পাব (০.৬৯৮১-০.৬৯৩০) = ০.০০৫১। এ পার্থক্যকে ফরেক্সের ভাষায় বলতে হবে ১৭-১৮ তারিখের মধ্যে মার্কেট ৫১ পিপস মুভ করেছে বা পরিবর্তিত হয়েছে। পিপসকে পয়েন্ট হিসেবেও অভিহিত করা হয়ে থাকে, তবে পিপস নামটিই বেশি জনপ্রিয়। পিপসের এ পরিবর্তন কয়েক মিনিটের মধ্যে হতে পারে বা আরো বেশি সময় লাগতে পারে।
ব্রোকার :
শেয়ার ব্যবসার সাথে যারা জড়িত তারা এবং ডলার বা অন্য দেশীয় মুদ্রা ভাঙ্গিয়েছেন তারা এ শব্দটির সাথে পরিচিত। ফরেক্সে ব্রোকার হচ্ছে আপনার পক্ষে কারেন্সি কেনাবেচার কাজ যে করবে সে। এটি সাধারণত একটি প্রতিষ্ঠান, যা ডলার এক্সচেঞ্জের কাজ করবে। অনলাইনে এরকম ভালো ব্রোকার কোম্পানি খুঁজে তাদের কোম্পানিতে আপনার অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। সে অ্যাকাউন্টে আপনার পুঁজি ডিপোজিট করতে হবে, যা দিয়ে আপনি ব্যবসায় শুরু করতে চান। তারা সে ডিপোজিটকৃত টাকা থেকে আপনার পক্ষ হয়ে কারেন্সি লেনদেন করবে। বাজারে হাজারো ব্রোকার কোম্পানি আছে। তাই এর মধ্য থেকে ভালো ব্রোকার খুঁজে বের করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তবে কিছু উপায় আছে ভালো ব্রোকার চেনার, সেগুলো জানতে হবে।
লেভারেজ :
ফরেক্সের লেভারেজ আর শেয়ারের লোন প্রায় একই বিষয়। তবে শেয়ারে দ্বিগুণের বেশি লোন দেয়া হয় না। কিন্তু ফরেক্সে আপনার পুঁজির ১০০০ গুণ বেশি পর্যন্ত লোন বা লেভারেজ পাওয়া সম্ভব। লেভারেজ ১:২০০ বলতে বোঝায় মূল পুঁজির ২০০ গুণ লেভারেজ। যদি আপনার অ্যাকাউন্টে ১০০ ডলার থাকে এবং আপনি ব্রোকার প্রদত্ত ১:১০০ লেভারেজ সুবিধা গ্রহণ করেন, তবে আপনার পুঁজি ১০০ ডলার, কিন্তু আপনি বিনিয়োগ করলেন ১০০০০ ডলার সমমূল্যের ট্রেড। লেভারেজ ব্যবহার করলে লাভ বা ক্ষতির পরিমাণ বেশি করা সম্ভব। কম অর্থ বিনিয়োগ করে লেভারেজ প্রয়োগ করে যেমন বেশি টাকা কামানো সম্ভব, তেমনি সব খুইয়ে অ্যাকাউন্ট শূন্য বানানোও সম্ভব। তাই বিজ্ঞদের পরামর্শ, বেশি লোভ না করে ১:১০০ বা ১:২০০ লেভারেজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা। আরো ভালো হয় লেভারেজ না নিয়ে কাজ করতে পারলে।
এক্সচেঞ্জ রেট :
এক্সচেঞ্জ রেট হচ্ছে একটি কারেন্সির সাপেক্ষে আরেকটি কারেন্সির দামের অনুপাত। USD/EUR-র এক্সচেঞ্জ রেট নির্দেশ করে কত মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ১ ইউরো কেনা যাবে। ঘুরিয়ে বললে বলা যায়, ১ মার্কিন ডলার কিনতে কত ইউরো প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ : ১ USD/EUR = ০.৬৯৮১ বলতে বোঝায় ১ ডলার কেনার জন্য প্রয়োজন হবে ০.৬৯৮১ ইউরো। উল্টোভাবে বললে, ১ ইউরো কেনার জন্য লাগবে (১/.০৬৯৮১) = ১.৪৩২৪ মার্কিন ডলার। এক্সচেঞ্জ বাড়া বা কমার সাথে লাভ-লোকসানের পরিমাণ বের করা যায়।
আরো অনেক শব্দ রয়েছে ফরেক্সের, যা ফরেক্স শেখার সময় দেখা যাবে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে : Bank Rate, Flat, Gap, Liquidity, Lot, Margin, Margin Account, Margin Call, Margin Order, Momentum, Moving Average, Offer, Order, Pivot Point, Scalping, Resistance, Settled Position, Slippage, Spread, Swap, Trend ইত্যাদি। এগুলো ইন্টারনেট ঘেঁটে শিখে নিন কাজে দেবে।
কখন করবেন ফরেক্স?
ফরেক্স মার্কেট খোলা থাকে ২৪ ঘণ্টাই। তাই দিনে হোক আর রাতেই হোক, আপনি অনায়াসে আপনার লেনদেন চালাতে পারবেন। তবে সপ্তাহের শুধু পাঁচ দিন। শনি ও রবিবার এ মার্কেটে লেনদেন বন্ধ থাকে। সোমবার সকাল থেকে লেনদেন শুরু হয় এবং তা বন্ধ হয়ে যায় শুক্রবার রাতে। সময়ের ব্যাপারটি সহজ মনে হলেও তা কিন্ত সহজ নয়। কারণ, একেক দেশের সময়ের মাঝে ব্যবধান রয়েছে। তাই ট্রেডিং টাইমের কিছুটা হেরফের হবে অবস্থানগত কারণে। গ্রীষ্মকাল ও শীতকালে ফরেক্স বাজারে সময়ের বেশ তারতম্য হয়। পাঠকদের সুবিধার্থে নিচে দুটি ছকের সাহায্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টাইম জোনের ফরেক্স ট্রেডিং টাইমের হেরফের দেখানো হলো। প্রথম ছকটি গ্রীষ্মকালীন ও দ্বিতীয়টি শীতকালীন।
ফরেক্সের ভাষায়, মার্কেট খোলা ও বন্ধের সময়কালকে সেশন হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ওপরের ছক ভালো করে লক্ষ করে দেখুন, রাত ৩:০০-৪:০০টায় ইস্টার্ন ডেলাইট টাইম অনুযায়ী টোকিও সেশন এবং লন্ডন সেশন ওভারল্যাপ করে। আবার একইভাবে সকাল ৮:০০-১২:০০টায় ইস্টার্ন ডেলাইট টাইম লন্ডন সেশন ও নিউইয়র্ক সেশন ওভারল্যাপ করে। ওভারল্যাপ করা সেশনে মার্কেট বেশি ব্যস্ত থাকে। কারণ একই সময়ে দুটি মার্কেট এখানে একযোগে কাজ শুরু করে। ফরেক্স মার্কেটে নিজের স্থান শক্তভাবে ধরে রাখতে চাইলে ফরেক্স সেশন, সেশন ওভারল্যাপ, বিভিন্ন বড় টাইম জোনের সেশন, নিজে যে স্থান থেকে কাজ করবেন সে স্থানের সেশনের বিস্তারিতসহ সব কিছু নিয়ে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে।
ফরেক্স ট্রেডিংয়ের উপযুক্ত সময়
০১. যখন দুটি মার্কেট সেশন ওভারল্যাপ করবে তখন;
০২. অন্য বড় সেশনগুলোর তুলনায় ইউরোপিয়ান সেশন যখন বেশি ব্যস্ত থাকবে এবং
০৩. সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে। কারণ, এ সময় এ বাজারে আলোড়ন সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে এবং মুদ্রার মানের ওঠা-নামায় বেশ তারতম্য দেখা দেয়।
ফরেক্স ট্রেডিংয়ের খারাপ সময়
০১. রোববার- কারণ ছুটির দিনে সবাই নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে বা ঘুরে বেড়াচ্ছে;
০২. শুক্রবার- কারণ সেশনের শেষের দিকে বাজার কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ে;
০৩. ছুটির দিন- এ ব্যাপারে আর নাইবা বললাম;
০৪. বড় কোনো ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এমন সময় যেমন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা দুনিয়া কাঁপিয়ে দেয়া চাঞ্চল্যকর কোনো ঘটনা এবং
০৫. আমেরিকান আইডল, এনবিএ ফাইনাল, ফিফা, ওয়ার্ল্ড কাপ ক্রিকেট, অলিম্পিক ইত্যাদি চলার সময়।
ফরেক্স মার্কেটের সময়ের এ সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য রয়েছে অনেক ধরনের সফটওয়্যার। সফটওয়্যারগুলো ফরেক্স মার্কেট আওয়ারস মনিটর নামে পরিচিত। এ ধরনের একটি সফটওয়্যার নামিয়ে বিভিন্ন দেশের সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সে দেশের মুদ্রা নিয়ে এ ব্যবসায় করতে পারবেন। আরো ভালো হয় নির্দিষ্ট কিছু দেশের টাইমটেবিল জেনে তার একটি তালিকা বানিয়ে তা সংরক্ষণ করা এবং প্রয়োজনে তার সাহায্য নেয়া।
কিভাবে আয় করা যায়?
বিভিন্ন দেশের মুদ্রার মান সব সময় একই রকম থাকে না, তা সময়ের সাথে এবং দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তিত হয়। যেমন : কয়েক বছর আগে ১ মার্কিন ডলারের সমান ছিল ৭০ টাকা। এখন তা বেড়ে ৭৪ টাকার মতো হয়েছে। কিছুদিন পর তা আরো বাড়তে পারে বা তার চেয়ে কমে যেতে পারে। টাকার মান ওঠা-নামার সাথে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা জড়িত। ফরেক্সের ভাষায়, অর্থের মানের এ তারতম্যকে বলতে গেলে বলতে হবে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমা মানে ডলার টাকার চেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে। আর টাকার মূল্যমান বাড়ার অর্থ হচ্ছে ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হচ্ছে। টাকা এখনো ফরেক্সের বাজারে নিজের স্থান শক্ত করে নেয়নি। ফরেক্সের বাজারের প্রধান মুদ্রাগুলো হলো : মার্কিন ডলার, ইউরো, ব্রিটিশ পাউন্ড, জাপানি ইয়েন, কানাডিয়ান ডলার, অস্ট্রেলিয়ান ডলার ইত্যাদি।
মনে করুন, আপনার কাছে ১০০ মার্কিন ডলার আছে। তা দিয়ে আপনি ৭০ ইউরো নিলেন। তার অর্থ হচ্ছে আপনি ১০০ ডলার বিক্রি করলেন এবং ৭০ ইউরো কিনলেন। কিছুদিন বা কিছু সময় পর ডলারের বিপরীতে ইউরোর দাম বেড়ে গেলে আপনি তা বিক্রি করে দিয়ে আগের চেয়ে বেশি ডলার পেলেন। ১০০ ডলারের সাথে ইউরোর লেনদেন করে বাড়তি যে ডলার আপনি আয় করলেন সেটাই আপনার লাভ। এভাবেই আপনি ফরেক্সে আয় করতে পারবেন। শেয়ার মার্কেটের বেলায় শুধু শেয়ারের দাম বাড়লেই লাভ করার সুযোগ থাকে, নতুবা নয়। কিন্তু ফরেক্স মার্কেটে মুদ্রার মান বাড়ুক বা কমুক অর্থাৎ শক্তিশালী হোক বা দুর্বল হোক, দুই ক্ষেত্রেই আপনি লাভ করার সুযোগ পাবেন। কারণ একটি মুদ্রার বিপরীতে আরেকটির মান বাড়বে বা কমবে।
ফরেক্সে লাভক্ষতির হিসাব
ফরেক্স মার্কেটে ট্রেড ওপেন বা খোলার এবং তা ক্লোজ বা বন্ধ করার পদ্ধতি বেশ সোজা। শুধু মাউস দিয়ে ক্লিক করেই তা অনায়াসে করতে পারবেন। কিন্তু কোন ট্রেডটি খুলবেন এবং কখন তা বন্ধ করবেন সে ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়াটা কঠিন। স্টক মার্কেট বা শেয়ার মার্কেটে ট্রেড করার অভিজ্ঞতা থাকলে এ ব্যাপারে আপনার তেমন একটা অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এখন দেখা যাক কিভাবে লাভ-লোকসান হয় ফরেক্স মার্কেটে।
মনে করুন, ১ ইউরো/মার্কিন ডলার = ১.৪২০০ এক্সচেঞ্জ রেটে (১ EUR/USD = ১.৪২০০) আপনি ১০০০ ইউরো কিনলেন ১৪২০.০ মার্কিন ডলার দিয়ে। দুই-তিন দিন পর বা এক সপ্তাহ পর এক্সচেঞ্জ বেড়ে হলো ১.৪৫০০। এক্সচেঞ্জ রেট বাড়ায় কিনে রাখা ১০০০ ইউরো আপনি বিক্রি করে দিলেন ১৪৫০.০ মার্কিন ডলারে। তাহলে আপনার লাভ হলো ১৪৫০-১৪২০ = ৩০ মার্কিন ডলার। এভাবে আপনি ১০০০ ইউরোর বদলে যদি ১০০০০০ ইউরো কিনতেন, তাহলে লাভের পরিমাণ হতো ৩০০০ মার্কিন ডলার। অপরদিকে কারেন্সি কেনার পর এক্সচেঞ্জ রেট যদি কমে যায়, তখন আপনার লোকসান হবে।
ফরেক্স কোটেশন পড়ার নিয়ম
ফরেক্স ট্রেডিংয়ের সময়ে প্রতিটি ট্রেডে একটি কারেন্সি কিনতে হয় এবং আরেকটি বিক্রি করতে হয়। এক্সচেঞ্জ রেটের দিকে বেশ খেয়াল রাখতে হয় প্রতিটি ট্রেড ওপেন করার পর। এক্সচেঞ্জ রেট ও কারেন্সি পেয়ার একটি নির্দিষ্ট ফরমেটে লেখা হয়, একে ফরেক্স কোটেশন বলে। সংক্ষেপে বলতে গেলে ইউএসডলার/ইউরো = ০.৬৯৮১ হচ্ছে একটি ফরেক্স কোটেশন। এখানে স্ল্যাশ (/)-এর আগে থাকা কারেন্সি বা ইউএসডলার (মার্কিন ডলার) হচ্ছে বেস (Base) কারেন্সি এবং স্ল্যাশের পরের কারেন্সি বা ইউরো হচ্ছে কুওট (Quote) কারেন্সি।
ফরেক্সে লং/শর্ট, বিড/আস্ক, বাই/সেল ইত্যাদি আরো কিছু টার্ম দেখতে পাবেন। এগুলোকে কি বোঝায়?
বাই/সেল (Buy/Sell) :
ট্রেড করার সময় কারেন্সি বাই ও সেল করতে হবে। তাই কেনার সময় এক্সচেঞ্জ রেট নির্দেশ করে ১ ইউনিট বেস কারেন্সি কেনার জন্য কত ইউনিট কুওট কারেন্সি দিতে হবে। ১ ইউএস ডলার/ইউরো = ০.৬৯৮১-এর ক্ষেত্রে ১ ডলার কেনার জন্য দিতে হবে ০.৬৯৮১ ইউরো।
বিক্রি করার সময় এক্সচেঞ্জ রেট নির্দেশ করে ১ ইউনিট বেস কারেন্সি বিক্রি করলে কত ইউনিট কুওট কারেন্সি পাওয়া যাবে। ১ ইউএস ডলার/ইউরো = ০.৬৯৮১-এর ক্ষেত্রে ১ ডলার বিক্রি করলে পাওয়া যাবে ০.৬৯৮১ ইউরো।
বেস কারেন্সি হলো বাই ও সেলের মূল ভিত্তি। যদি আপনি ইউএসডলার/ইউরো বাই করেন, তবে আপনি বেস কারেন্সি ইউএসডলার কিনছেন এবং একই সাথে কুওট কারেন্সি ইউরো বিক্রি করছেন। সহজ কথায় ইউএসডলার কেনা, ইউরো বিক্রি করা।
আপনি একটি কারেন্সি পেয়ার বাই করবেন যখন আপনার মনে হবে যে, কুওট কারেন্সির তুলনায় বেস কারেন্সি শক্তিশালী হবে। এরপর আপনি সেল করবেন তখন, যখন আপনার মনে হবে কুওট কারেন্সির তুলনায় বেস কারেন্সি দুর্বল হয়ে যাবে।
লং/শর্ট (Long/Short) :
ট্রেড শুরু করার আগে বাই করবেন না সেল করবেন, তা ঠিক করে নিতে হবে। আপনি ঠিক করলেন বাই করবেন, তার মানে হচ্ছে আপনি বেস কারেন্সি কিনবেন এবং কুওট কারেন্সি বিক্রি করবেন। এখন বাই করার পর আপনার চাওয়া থাকবে বেস কারেন্সির দাম বেড়ে যাক, তাহলে আপনি বেশি লাভে তা বিক্রি করতে পারবেন। ফরেক্সের ভাষায় আপনি লং পজিশনে রয়েছেন। সহজভাবে মনে রাখার জন্য বলা বাই করলে তা লং পজিশন।
একইভাবে যদি আপনার ইচ্ছে হয় সেল করার অর্থাৎ বেস কারেন্সি বিক্রি করা এবং কুওট কারেন্সি কেনার। তাহলে সেল করার পর আপনার লক্ষ থাকবে বেস কারেন্সির দাম কমে গেলে, তা আপনি কিনবেন আরো কম দামে। ফরেক্সের ভাষায় আপনি আছেন শর্ট পজিশনে। শর্ট পজিশন সেলের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
বিড/আস্ক (Bid/Ask) :
ফরেক্স ট্রেডিং সফটওয়্যার ব্যবহার করার সময় দেখবেন কোটেশনে দুটি কারেন্সির মূল্য দেয়া থাকে। যে মূল্য দুটি দেয়া থাকে তাদের বিড ও আস্ক বলা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিডের মূল্য আস্কের মূল্যের চেয়ে কম হয়। অর্থাৎ বিড ছোট ও আস্ক বড়।
বিড হচ্ছে এমন একটি মূল্য, যে দামে ব্রোকার কুওট কারেন্সির পরিবর্তে বেস কারেন্সি কিনতে চায়। অর্থাৎ সেল করার জন্য বিড হলো সবচেয়ে ভালো মূল্য।
আস্ক হলো এমন একটি মূল্য, যে দামে ব্রোকার কুওট কারেন্সির পরিবর্তে বেস কারেন্সি বিক্রি করতে চায়। অর্থাৎ বাই করার জন্য আস্ক হলো সবচেয়ে ভালো মূল্য।
ডলার/ইউরো = ০.৬৯৮১ হচ্ছে বিড এবং তা বেড়ে যদি ০.৭০১০ হয় তবে তা হচ্ছে আস্ক। তাদের পার্থক্য হচ্ছে (০.৭০১০-০.৬৯৮১) = ০.০০২৯ বা ২৯ পিপস। এ পার্থক্যকে বলা হয় স্প্রেড।
ফরেক্স ট্রেডিংয়ের জন্য কী কী দরকার?
ফরেক্স ট্রেডিংয়ের জন্য তেমন একটা কিছুর প্রয়োজন হবে না। শুধু একটি কমপিউটার ও ভালোমানের ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই হবে। এমন কোনো ইন্টারনেট লাইন এ কাজে ব্যবহার করা উচিত নয়, যা যখন-তখন ডিজ্যাবল হয়ে যায়। কারণ, ট্রেডিংয়ের মোক্ষম সময়ে যদি ইন্টারনেট কানেকশনে সমস্যা হয়, আপনার অবস্থা কি দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমেয়? তেমন হাই কনফিগারেশনের পিসির প্রয়োজন নেই। কারণ, ইন্টারেন্ট ব্রাউজিং ও হালকা কিছু ট্রেডিং সফটওয়্যার চালনা ছাড়া তেমন কোনো কঠিন কাজ করতে হবে না ফরেক্স ট্রেডিং করার সময়। ঘরের বাইরে যদি বেশি সময় কাটান, তবে ব্যবহার করতে পারেন ইন্টারনেট কানেকশনসহ একটি ল্যাপটপ বা উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমচালিত মোবাইল। আরো লাগবে কিছুটা পুঁজি বা মূলধন, যা দিয়ে আপনি ট্রেডিং শুরু করবেন। তার পরিমাণ ন্যূনতম ১ মার্কিন ডলার হতে হবে। এরপর থাকতে হবে একজন ব্রোকার যে আপনার পক্ষে মুদ্রা কেনাবেচার কাজ করবে, ঠিক যেমনভাবে শেয়ার বাজারে ব্রোকার আপনার জন্য শেয়ার বেচাকেনা করে দেয়। অনলাইনে অনেক ব্রোকার আছে, তাই এ নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। ভালো কিছু ব্রোকারের মধ্যে রয়েছে : Hot ForeX, Trading Point, Delta Stock AD, eToro, Fast Brokers, Tadawul FX, MB Trading, Windsor Brokers ইত্যাদি। ভালো ব্রোকারের কিছু বৈশিষ্ট্যের মধ্যে আছে : কম টাকায় অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা রাখা, কম বিনিয়োগে ট্রেডিং করার সুবিধা দেয়া, স্প্রেডের পরিমাণ কম হওয়া, অর্ডার খুব দ্রুত নিষ্পন্ন করার সুবিধা, ভালো সাপোর্ট, অনেক ক্যাটাগরির লেভারেজ সুবিধা রাখা ইত্যাদি।
ফরেক্সে ক্যারিয়ার
ফরেক্সে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ আছে। ফুল টাইম জব হিসেবে অনেকেই ফরেক্সে কাজ করছেন। বিভিন্ন বিদেশী প্রতিষ্ঠান তাদের পক্ষ হয়ে ট্রেডিং পরিচালনা করার জন্য দক্ষ ট্রেডার নিয়োজিত করে থাকে। তাদের বেতন আকাশচুম্বী। হাজার ডলারেরও বেশি তাদের বেতন। ফরেক্সে ভালো ট্রেডার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারলে দেশে বসেই বিদেশী প্রতিষ্ঠানের জন্য ফরেক্স ট্রেডিং করে আয় করতে পারেন বিশাল অঙ্কের টাকা। ব্রোকার কোম্পানিগুলোতেও আছে কাজ করার সুযোগ। তবে আমাদের দেশের এখনো ভালো কোনো ফরেক্স ব্রোকারেজ হাউস গড়ে ওঠেনি। আমাদের পার্শববর্তী দেশ ভারতে বেশ কয়েকটি এ ধরনের ফার্ম গড়ে উঠেছে।
ফরেক্সে কাজের কৌশল
ফরেক্সে কাজ করে টিকে থাকার জন্য বেশ কিছু কৌশল প্রয়োগ করতে হয়। সেজন্য ট্রেড শুরু করার আগে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে :
০১. কোন কারেন্সি পেয়ার নিয়ে আপনি ট্রেড করবেন?
০২. কতটুকু রিস্ক নেবেন?
০৩. লেভারেজ নেবেন কি নেবেন না?
০৪. কতটুকু লাভ করতে চান?
০৫. কত বিনিয়োগ করবেন?
সিদ্ধান্ত নেয়ার পরপর ট্রেড শুরু করার আগেই যা আপনার কিছু করার আছে তা হচ্ছে :
০১. যে ট্রেড করেছেন তার দাম বাড়বে না কমবে তার সম্পর্কে ধারণা রাখা;
০২. কিভাবে ট্রেডিং করবেন তার চার্ট বানিয়ে রাখা;
০৩. কী কারণে দামের হেরফের হতে পারে তার কারণ জেনে রাখা;
০৪. কতটুকু দাম বাড়তে বা কমতে পারে তার সম্পর্কে ধারণা থাকা এবং
০৫. ট্রেডটিতে কত লাভ বা লোকসান হলে তা বন্ধ করে দেবেন, তা নির্ধারণ করে রাখা।
মেটা ট্রেডার সফটওয়্যারের সাহায্যে কতটুকু লাভ হলে বা ক্ষতির দিকে কতটুকু মুভ করলে ট্রেড বন্ধ হয়ে যাবে, তা নির্ধারণ করে দেয়া যায়। এতে আপনাকে কমপিউটারের সামনে বসে তদারকি করতে হবে না, আপনার অনুপস্থিতিতেই আপনার নির্দেশ অনুযায়ী তা ট্রেড বন্ধ করে দেবে। এ পদ্ধতিকে টেক প্রফিট ও স্টপ লস বলে। এ ধরনের আরো অনেক কৌশল রয়েছে, যা কাজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জানা যাবে।
বাজার বিশ্লেষণ
ফরেক্সে ভালো ফল পেতে বাজার বিশ্লেষণের বিকল্প নেই। বাজার বিশ্লেষণ বা মার্কেট অ্যানালাইসিস তিন ধরনের। এগুলো হচ্ছে :
০১. ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস;
০২. টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস;
০৩. সেন্টিমেন্টাল অ্যানালাইসিস।
তবে প্রথম দুটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস হচ্ছে কোনো দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও রাজনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করে সেই দেশের মুদ্রার মান বাড়বে না কমবে, তা থেকে ধারণা করা। টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস হচ্ছে মুদ্রার অতীত দামের ওপর ভিত্তি করে বর্তমানে কোন অবস্থানে আছে এবং ভবিষ্যতে তার দাম বাড়বে না কমবে তা শনাক্ত করার পদ্ধতি। টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিসে চার্ট বা তালিকা অ্যানালাইসিস করতে হয় বেশ কয়েক দিন বা আরো বেশি সময়ের।
কাদের জন্য এ ফরেক্স?
যে কোনো পেশার ও বয়সের লোক ফরেক্স মার্কেটে আসার ক্ষমতা রাখেন, কিন্তু সফল হওয়ার জন্য এবং টিকে থাকার জন্য প্রয়োজন হবে বেশ কিছু অভিজ্ঞতা ও পড়াশোনার। পড়াশোনা বলতে বই-খাতা নিয়ে ২-১ বছর কোনো ব্যবসায়িক বিষয়ের ওপরে পড়তে হবে, তা কিন্তু নয়। ফরেক্সের সাথে সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলোর ব্যাপারে ভালো জ্ঞান রাখতে হবে, নিয়মিত মার্কেটের খোঁজ নিতে হবে, মার্কেট বিশ্লেষণ করার বেশ কিছু পদ্ধতি আছে তা জেনে সঠিকভাবে চর্চা ও প্রয়োগ করতে হবে, চোখ-কান সর্বদা খোলা রাখতে হবে, যারা ফরেক্স ব্যবসায় অগ্রগ্রামী ও সফল, তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে এবং তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে হবে ও সেই সাথে ইন্টারনেটে প্রচুর ঘাঁটাঘাঁটি করতে হবে ফরেক্স সম্পর্কে জ্ঞানের ভান্ডার আরো ভারি করার জন্য। সংক্ষেপে বলতে গেলে এটিই হচ্ছে ফরেক্সের পড়াশোনা। তবে সফল ফরেক্স ট্রেডার ও বড় বড় অর্থনৈতিক বোদ্ধার লেখা বেশ কিছু বইও আছে ফরেক্স সম্পর্কে। নিজের দক্ষতা আরো বাড়াতে চাইলে সেগুলো সংগ্রহ করে পড়ে দেখতে পারেন। সবাই ফরেক্সে কাজ করতে পারবেন বললেই তো আর সবার জন্য তা নয়। কিছুটা অগ্রাধিকার পাওয়ার মতো লোক তো থাকবেনই।
সেরকম কিছু ব্যক্তির কথা এখানে তুলে ধরা হলো :
০১. যারা ফুল টাইম জব করেন না এবং হাতে বেশ কিছু সময় থাকে, তারা আসতে পারেন এ পেশায়;
০২. যাদের ফুল টাইম জব রয়েছে, কিন্তু একটু বাড়তি ইনকাম হলে ভালো হয় তারাও আসতে পারেন। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে এখানেও কিন্তু সময় দিতে হবে;
০৩. শিক্ষিত, কিন্তু যাদের হাতে কাজ নেই এবং কাজও পাচ্ছেন না, তারা বেশ সময় পাবেন এ ব্যবসায় নিজের দক্ষতা প্রমাণে;
০৪. যাদের নতুন কিছু শেখার আগ্রহ আছে এবং এ লাইনে ভালো ফল পাওয়ার আশা রাখেন তারা;
০৫. শেয়ার মার্কেটের যারা ভালো-দক্ষ কিন্তু বাজারের মন্দাভাবের কারণে ভালো কাজ করতে পারেছেন না, তারা আসতে পারেন মন্দাবিহীন এ বাজারে;
০৬. গণিতে যারা ভালো তারাও যোগ দিতে পারেন। কারণ এ ব্যবসায় যে গণিত ভালো জানা লোকেরা বেশি বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারবেন;
০৭. যাদের ফিবোনাচ্চি ও এলিয়ট সম্পর্কে আগ্রহ আছে এবং এসব থিওরি কিভাবে টাকা উপার্জনে সাহায্য করতে পারে, তা জানার চেষ্টা করার জন্য এ বাজারে আসতে পারেন এবং
০৮. ঘরে বসে ইন্টারনেট থেকে আয় করতে চান যারা তারাও আসতে পারেন, তবে তারা ইংরেজিতে ভালো হলে তবেই মার্কেটে টিকে থাকতে পারবেন। কারণ, মার্কেট অ্যানালাইসিস করার জন্য অনেক খবর রাখতে হবে। সব খবর দেশী পত্রিকায় নাও থাকতে পারে, তাই বিদেশী পত্রিকা বা ইন্টারনেটে ইংরেজি নিউজ শুনে মার্কেট যাচাই করতে হতে পারে।
কাদের জন্য ফরেক্স নয়?
০১. যারা মনে করছেন সহজে টাকা কামানোর চিন্তা করছেন তারা;
০২. কাজ না করে হাত গুটিয়ে বসে বসে ফরেক্স থেকে টাকা কামাতে চান তারা;
০৩. কম কাজ করে বেশি লাভ পেতে চান যারা;
০৪. অল্প সময়ে বড়লোক হওয়ার চিন্তা যাদের তারা;
০৫. যাদের টেকনিক্যাল ও ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস এবং ফরেক্সের সাথে জড়িত শব্দগুলো সম্পর্কে ভালো জ্ঞান নেই তারা;
০৬. যারা অল্প সময় ডেমো ট্রেডিং করে মনে করছেন রিয়েল ট্রেডিংয়ে ভালো করবেন তারা ফরেক্স মার্কেটে বেশিদিন টিকতে পারবেন না। সফল ফরেক্স ট্রেডারেরা নতুনদের ১ বছর ডেমো ট্রেডিং করে ভালো ফল লাভ করার পর রিয়েল ফরেক্স ট্রেডিংয়ে আসার পরামর্শ দেন। এত সময় অপেক্ষা করতে না চাইলে অন্তত ১ মাস ডেমো ট্রেডিং না করে কেউ এ ব্যবসায় আসবেন না। ডেমো ট্রেডিংয়ে নিজের অবস্থান ভালো না থাকলে রিয়েল ট্রেডিংয়ে আসার কথা চিন্তা করাও বোকামি;
০৭. খুব কম সময়ে ফরেক্স শিখে কাজে নামতে চাচ্ছেন, তবে তা ভুলে যান, কারণ ফরেক্সে তাড়াহুড়া করে কোনো কাজ করলে ফল শূন্য পেতে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না এবং
০৮. ফরেক্স কোচিং করে নিজেকে ভালো ট্রেডার মনে করলে হবে না। থিওরি জানবেন ঠিক আছে, কিন্তু বাস্তবে কাজ না করে কোনোদিনই এ কাজে ভালো ফল আশা করা যায় না। ডেমো ট্রেডিংয়ে ফরেক্স ভালোভাবে চর্চা করে নিজের দক্ষতা যাচাই না করে ফরেক্সে আসার ভুল কখনই করবেন না।
ফরেক্স শিখবেন কিভাবে?
আমাদের দেশে ফরেক্স শেখার ভালো কোনো কোচিং বা প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি। ইন্টারনেটে ফোরাম, বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ব্লগগুলোতে নজর রাখলেই আপনার জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ হবে। আলাদা কোচিং করে টাকা ও সময় নষ্ট করার কোনো অর্থ হয় না। পত্রপত্রিকায় যেসব ফরেক্স শেখানোর বিজ্ঞাপন দেয়া হয়, সেগুলোর শিক্ষার মান কেমন, তা সঠিক করে বলা সম্ভব নয়। কারণ, ফরেক্স শেখার জন্য নিজেই নিজের শিক্ষক হতে হবে প্রথমে, মনেপ্রাণে পণ করতে হবে আপনি এ ব্যবসায় সফল হয়েই ছাড়বেন। এরপর লাগবে সঠিক দিকনির্দেশনা, এরপর ফরেক্স নিয়ে স্টাডি ও অ্যানালাইসিস, আরো লাগবে দক্ষ ট্রেডারদের সাথে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করা। সব শেষে থাকতে হবে কঠোর পরিশ্রম করার ও ধৈর্য ধরে রাখতে পারার মনোভাব। ফরেক্স শেখানোর জন্য বেশ কিছু বাংলা ওয়েবসাইট ও ব্লগ খুঁজলেই পাবেন। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে : www.bdpips.com ও www.outsourcingbd.com। বিডিপিপস বাংলাদেশের প্রথম ফরেক্স ফোরাম ও ফরেক্স স্কুল, যেখানে পর্যায়ক্রমে ফরেক্সের ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। ইংরেজি ওয়েবসাইটের মধ্যে ফরেক্স শেখার বেশ ভালো একটি সাইট হচ্ছে : www.babypips.com।
ফরেক্স অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম
এটি অনেকটা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার মতো ব্যাপার। ব্রোকার বাছাই করে তাদের কোম্পানিতে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় যে ফর্ম পাবেন তাতে আপনার নাম, ঠিকানা, বয়স, ই-মেইল অ্যাড্রেস, ফোন নাম্বারসহ আরো কিছু তথ্য দিতে হবে। কিছু ব্যতিক্রম ব্যাপারের মধ্যে রয়েছে :
০১. সোয়াপ (Swap) :
এটি হচ্ছে সুদ। বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হারের ওপরে ভিত্তি করে আপনার ট্রেডে আপনাকে সুদ দেয়া হবে বা আপনার কাছ থেকে নেয়া হবে। মুসলমানদের জন্য সুদ নেয়া বা দেয়া হারাম। তাই যারা সুদের কারবার করতে না চান তারা এ অপশন সিলেক্ট করবেন না।
০২. লেভারেজ :
আগেই বলা হয়েছে এ ব্যাপারে। কত অনুপাতে লোন নিতে চান, তা এখানে নির্ধারণ করে দিতে হয়। আপনার পুঁজি বেশি হলে লেভারেজ না নেয়াই ভালো। পুঁজি কম হলে লেভারেজ নিতে পারেন। তবে বেশি নেবেন না। ১:৫০-১:২০০-এর চেয়ে বেশি লেভারেজ নেয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
০৩. অ্যাকাউন্ট কারেন্সি :
কোন কারেন্সিতে আপনি অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করবেন তা সিলেক্ট করতে হবে। এখানে মার্কিন ডলার বা ইউএস ডলার সিলেক্ট করাটাই ভালো এবং
০৪. অ্যাকাউন্ট টাইপ :
আপনার পুঁজির ওপরে নির্ভর করবে আপনার অ্যাকাউন্টের আকার কিরকম হবে। এটি মাইক্রো, মিনি ও স্ট্যান্ডার্ড এ ধরনের ভাগে বিভক্ত থাকতে পারে।
কিছু অ্যাকাউন্ট শুধু মেইল ভেরিফিকেশনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। এরা ভেরিফাই করার জন্য আরো কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে। তাই আপনাকে আপনার পাসপোর্ট নাম্বার, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি এবং ঠিকানা ভেরিফিকেশন করার জন্য বিদ্যুৎ/গ্যাস/পানি বা মোবাইল/ ইন্টারনেটের বিল অথবা ব্যাংক স্টেটমেন্টের স্ক্যান করা কপিও দেয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন না করে ডিপোজিট করা উচিত নয়।
কাজ শুরু করবেন কিভাবে?
ফরেক্সের জগতে প্রবেশের জন্য আপনাকে প্রথমে ভালো দেখে একটি ব্রোকার কোম্পানিতে অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে হবে। তারপর তাতে কিছু অর্থ ডিপোজিট বা জমা করতে হবে। অনলাইনে অ্যাকাউন্ট খুব সহজেই খুলে ফেলতে পারবেন ব্রোকারের দেয়া ফর্ম পূরণের মাধ্যমে। ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ আপনি আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্ট যেমন : PayPal, Alert Pay, Liberty Reserve, Money Bookers, Neteller, WebMoney, Western Union, MoneyGram বা ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড থেকেও ডিপোজিট করতে পারেন। আপনার পুঁজি কিভাবে ডিপোজিট করবেন তা নির্ভর করে ব্রোকারের ওপরে, তারা কী ধরনের মানি ট্রান্সফার পদ্ধতি সাপোর্ট করে সে অনুযায়ী আপনাকে ডিপোজিট করতে হবে। ডিপোজিটের ব্যাপারে কী করতে হবে, তা ব্রোকারের সাইটে বিস্তারিত লেখা থাকে, তাই চিন্তার কোনো কারণ নেই। অ্যাকাউন্টে আপনার পুঁজি জমা হলেই আপনি সে অর্থ দিয়ে ট্রেড শুরু করতে পারবেন। ফরেক্সে ট্রেড করার জন্য ট্রেডিং সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হয়। ব্রোকারের সাইটেই এ ধরনের সফটওয়্যার দেয়া থাকে, যা আপনি বিনামূল্যে ডাউনলোড করে নিয়ে কাজ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে সফটওয়্যার ইনস্টল করার পর ব্রোকারের কাছ থেকে পাওয়া ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে তাতে লগইন করতে হবে। বেশিরভাগ ব্রোকার মেটাট্রেডার নামের একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকেন।
ডেমো ট্রেডিং
নতুনদের জন্য ডেমো ট্রেডিং অত্যাবশ্যক। ব্রোকারের সাইটে অ্যাকাউন্ট খোলার পর রিয়েল ট্রেডিং না করে আপনি ডেমো ট্রেডিং করার অপশন পাবেন। সেখানে তারা কিছু ভার্চুয়াল মানি দেবে আপনাকে ট্রেড করার জন্য। কিন্তু মার্কেটের ডাটা বা কারেন্সি এক্সচেঞ্জ রেট আসল হবে। আসল মার্কেটে নকল অর্থ ব্যবহার করে ট্রেড করতে হবে। ট্রেড করে আপনি কতটা লাভ বা লোকসান করেন তা পর্যালোচনা করলেই বুঝতে পারবেন ফরেক্সে আপনার দক্ষতা কতটুকু। ডেমো ট্রেডিংকে ফরেক্সে আপনার প্রাথমিক অভিজ্ঞতা বলতে পারেন। ফরেক্সে ভালো করতে চাইলে ২-৩ মাস ডেমো ট্রেডিং করুন এবং নিজের অবস্থান ভালো থাকলে তবেই রিয়েল ফরেক্স ট্রেডিংয়ে নামুন।
ডিপোজিট না করেই ট্রেড করার উপায়
যারা নতুন তারা ডেমো ট্রেডিং শেষে ডিপোজিট করতে অনেকেই সমস্যায় পড়েন। কারণ, তাদের ডিপোজিট ট্রান্সফার করার উপায় জানা থাকে না বা করতে পারেন না। এমন ট্রেডারদের জন্য কিছু ব্রোকার কোম্পানি বোনাস ডিপোজিটের ব্যবস্থা রেখেছে, যারা বিভিন্ন ধরনের বোনাস দিয়ে থাকে। বোনাস দেয়া ডিপোজিট উঠানো যাবে না, কিন্তু লাভ করা অর্থ উঠানো যাবে। নিচে এমন কিছু ব্রোকারের নাম ও বোনাসের পরিমাণ দেয়া হলো :
লাইটফরেক্স (liteforeX.com)….. :........ ২০০ ডলার
পাক্সফরক্সে (paXforeX.com)…. :……১০০ ডলার
ট্রেডিং পয়েন্ট (trading-point.com):…...২৫ ডলার
রোবোফরেক্স (roboforeX.com)..:……...১৫ ডলার
নর্ডএফএক্স (nordfX.com) …… :…...…৮ ডলার
মার্কেটিভা (marketiva.com)…. :…...…৫ ডলার
ফরেক্সসেন্ট (foreXcent.com)… :…...…৫ ডলার
ফরেক্স মার্কেটের সুবিধা
ফরেক্স মার্কেটের সুবিধাগুলো হলো :
০১. শেয়ার মার্কেটে শুধু শেয়ারের দাম বাড়লেই লাভ করা সম্ভব কিন্তু ফরেক্স মুদ্রার দাম বাড়ুক বা কমুক তাও লাভ করা সম্ভব;
০২. মাত্র ১ ডলার পুঁজি নিয়েও ব্যবসায় শুরু করা যায়;
০৩. ডিপোজিট না করে কিছু ব্রোকারের দেয়া বোনাস মানি দিয়েও ব্যবসা শুরু করা যায়;
০৪. ভার্চুয়াল মানি দিয়ে ডেমো ট্রেডিং করে নিজেকে এ ব্যবসার উপযুক্ত করে গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে;
০৫. অনেক বড় অঙ্কের লোন বা লেভারেজ পাওয়া যায়;
০৬. খুব কম সময়ে ১৫-২০ সেকেন্ডের মধ্যেও বেশ ভালো লাভ করা সম্ভব;
০৭. ঘরে বসেই কাজ করা যায়;
০৮. কমপিউটার ও ইন্টারনেট কানেশন ছাড়া আর কিছু লাগে না;
০৯. তুলনামূলক কম সময় নষ্ট করে ভালো ইনকাম করা যায়;
১০. পৃথিবীর যেকোনো স্থানে বসে এ ব্যবসায় করা সম্ভব, যদি সেখানে ইন্টারনেট কানেকশন থাকে;
১১. স্টক মার্কেটের চেয়ে বেশি মার্কেট লিকুইডিটি বিদ্যমান;
১২. সফটওয়্যার পরিচালনা ও অন্যান্য বিষয় একবার বুঝে নিলে তা কঠিন মনে হবে না;
১৩. মার্কেটের আকার এত বিশাল যে ব্যক্তিগতভাবে বা কোনো গোষ্ঠী তাতে প্রভাব ফেলতে পারবে না;
১৪. এ বাজারে মন্দা বলতে কিছু নেই;
১৫. কেনাবেচার জন্য কাউকে কোনো কমিশন দিতে হবে না এবং
১৬. স্বাধীনভাবে কাজ করা যাবে।
ফরেক্স ট্রেডিংয়ের অসুবিধা
সবকিছুরই ভালো-মন্দ দুটি দিক রয়েছে। তেমনি ফরেক্সে ব্যবসায়ের সুবিধার পাশে কিছু সমস্যার মধ্যে রয়েছে :
০১. প্রফেশনাল ট্রেডারদের সাহায্য ও পরামর্শ লাগে সবসময়;
০২. নিয়মিত মার্কেট মনিটরিং করতে হয়;
০৩. বেশ ভালো স্টাডি ও অ্যানালাইসিস করতে হয়;
০৪. নতুনদের জন্য বেশ রিস্কি;
০৫. ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে, তাই অনেক ট্রেডার সমস্যায় পড়েন;
০৬. ইন্টারনেটে অনেক ধোঁকাবাজ ব্রোকার রয়েছে যারা ডিপোজিট করা টাকা মেরে দেবে;
০৭. সবসময় সতর্ক থাকতে হয় কোনো ট্রেড করার পর এবং
০৮. প্রচুর শ্রম দিতে হবে ও অভিজ্ঞ হতে হবে।
শেষ কথা
ফরেক্স ব্যবসায়কে গাড়ি চালনার সাথে তুলনা করা যেতে পারে। যদি আপনি গাড়ি চালানোর মৌলিক ধারণা নিয়ে গাড়ি চালনা শুরু করেন, তবে আপনি গাড়ি চালাতে পারবেন ঠিকই। কিন্তু একসময় বিপদে আপনাকে পড়তেই হবে। গাড়ি ভালোভাবে না চালাতে জানলে হয় গিয়ে পড়বেন খাদে, না হয় অ্যাক্সিডেন্ট করে পড়ে থাকবেন হাসপাতালের বেডে। যদি গাড়ি ভালোভাবে হাতেকলমে চালানো শেখেন এবং রাস্তার সিগন্যাল ঠিকভাবে মেনে চলেন, তবে আপনি ভালো ড্রাইভার হতে পারবেন। ধীরে ধীরে আরো ভালো দক্ষতা অর্জন করলে আরো ভালো গাড়ি চালাতে পারবেন এবং যেকোনো মডেলের গাড়ি চালাতে পারবেন। ঠিক তেমনি ফরেক্স মার্কেটে মৌলিক ধারণা না নিয়ে রিয়েল ট্রেডিংয়ে নেমে গেলে সর্বনাশ হতে বেশি সময় লাগবে না। ডেমো ট্রেডিং করে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে এবং সবসময় দক্ষ ট্রেডারদের কাছ থেকে সাহায্য নিতে হবে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে হবে এবং বেশি লোভ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যথাসম্ভব কম রিস্ক নিয়ে ট্রেড করতে হবে। দক্ষ ট্রেডারদের মতে ১-২% ঝুঁকি নিয়ে ট্রেড করা উচিত। ফরেক্সে যারা নতুন তাদের বেশিরভাগই প্রায় ৯৫% ক্ষতির মুখোমুখি হন এবং মাত্র ৫% সফলতা লাভ করেন। এর কারণ হচ্ছে ৫% ট্রেডার ভালোভাবে মার্কেট অ্যানালাইসিস করে তারপর কাজে নামেন আর বাকিরা তা করেন না। ফরেক্সে কাজ করার সময় বেশ সতর্ক থাকতে হবে। তা না হলে অনেক ক্ষতি হতে পারে। ফরেক্স বেশ ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু কিছু উপায় মেনে চললে তা তেমন একটা কঠিন বা ঝামেলার মনে হবে না। যত বেশি জ্ঞান আহরণ করতে পারবেন, ততই সাফল্য লাভ করতে পারবেন। তাই ফরেক্সের জগতে আসার আগে নিজেকে ভালো করে তৈরি করে নিন।
ফরেক্স শব্দটি আমাদের দেশে নতুনই বলা চলে। বাংলাদেশে এ নিয়ে তেমন একটা কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়নি। তবে সবার কাছে শিগগিরই তা যে এক আলোড়নের জন্ম দেবে, তা বোঝা যাচ্ছে বাংলা ওয়েবসাইট ও ব্লগগুলোতে ফরেক্সে চর্চার প্রচার ও প্রসার দেখে। আমাদের দেশ বরাবরের মতোই অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে। ফরেক্সের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। এশিয়ার কিছু দেশ যেখানে ফরেক্স মার্কেটের বেশ প্রসার ঘটিয়েছে, সেখানে আমরা মাত্র হাঁটি হাঁটি পা পা করে এ পথে এগুচ্ছি। পৃথিবীর মুদ্রা কেনাবেচার সবচেয়ে বড় বাজার ফরেক্সে বিচরণ করার জন্য এ কাজকে ভালো করে জানতে-চিনতে হবে। টাকা কামানোর সহজ কোনো পদ্ধতি নেই। শুধু শ্রম, অভিজ্ঞতা বা মেধার একক ব্যবহার করে টাকা কামানোর চিন্তা করা বোকামি। বড় ব্যবসায়ীরা শুধু শ্রম নয়, এর সাথে তাদের মেধা ও অভিজ্ঞতার বিশাল ভান্ডারের সমন্বয় করতে পেরেছেন বলেই এরা আজ এতটা সফল হতে পেরেছেন। তাই ফরেক্সের জগতে আসার আগে কিছু প্রস্ত্ততির প্রয়োজন। এখানে ফরেক্সের সাধারণ কিছু দিক তুলে ধরা হলো, যাতে ফরেক্স সম্পর্কে পাঠক সাধারণের কিছুটা ধারণা হয়। আশা করা যায়, ফরেক্সের জগতে বিচরণের জন্য কী কী বিষয়ে জানতে হবে, তার একটি সংক্ষিপ্ত গাইডলাইন পাঠকেরা পেয়ে যাবেন।
ফরেক্স কী?
ফরেন কারেন্সি এক্সচেঞ্জ মার্কেটকে সংক্ষেপে ফরেক্স (ForeX) বা এফএক্স (FX) বা কারেন্সি মার্কেট বলা হয়। একে স্পট ফরেক্স বা রিটেইল ফরেক্সও বলা হয়। শেয়ার মার্কেটে কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা হয়। কিন্তু ফরেক্সের বাজারে বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচা করা হয়। এখানে আপনি একটি দেশের মুদ্রা বিক্রি করে আরেক দেশের মুদ্রা কিনতে পারবেন। আমেরিকার মুদ্রা ডলার এবং ব্রিটেনের মুদ্রা পাউন্ড। ফরেক্স মার্কেটে আপনি ডলার বিক্রি করে পাউন্ড কিনতে পারবেন বা পাউন্ড বিক্রি করে ডলার কিনতে পারবেন।
একটি উদাহরণ দিলে ব্যাপারটি আরো স্পষ্ট হবে। ধরুন, আপনি ফ্রান্সে বেড়াতে গেলেন। সেখানে যাওয়ার পর কিছু কেনার প্রয়োজন হলো। আপনার কাছে আছে মার্কিন ডলার। আপনি যদি দোকানিকে ডলার দেন, তবে সে তা নেবে না। সে চাইবে ইউরো। তাই আপনাকে আগে ডলারের বিনিময়ে সংগ্রহ করতে হবে ইউরো বা ইউরোপীয় দেশের মুদ্রা ফ্রাঙ্ক । মানি এক্সচেঞ্জ করার জন্য আপনাকে সাহায্য নিতে হবে মানি এক্সচেঞ্জারের। তার কাছে ১০০ ডলার দিয়ে আপনি পেলেন ৭০ ইউরো। এখানে আপনি ইউরো কিনেছেন, মার্কিন ডলার বিক্রি করেছেন।
ফরেক্স মার্কেট
পৃথিবীর অন্যতম একটি শেয়ার বাজার হচ্ছে নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ। প্রতিদিন প্রায় ৭৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের লেনদেন হয় এ বাজারে। অর্থের পরিমাণ কী বেশি বড় মনে হচ্ছে? ফরেক্স মার্কেটের তুলনায় তা অতি নগণ্য। ফরেক্স মার্কেটে দিনে প্রায় ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সমান অর্থের লেনদেন হয়। ফরেক্সের এমন কোনো প্রতিষ্ঠান বা সেন্টার নেই, যে এককভাবে এত বড় অর্থের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে বা বিপুল অর্থের বিনিময় দেখাশোনা করে। প্রধানত বড় বড় ব্যাংক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্রোকারদের মাঝে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশাল এ বাজারে অর্থের বিনিময় হয়ে থাকে। ফরেক্স আগে বিভিন্ন দেশের বড় বড় ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, সাধারণ মানুষের প্রবেশ ছিল না এ জগতে। কিন্তু প্রযুক্তির কল্যাণে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হয়ে যাওয়ায় ছোট ব্যবসায়ীদের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছেছে ফরেক্স। অনলাইনে ইন্টারনেট কানেকশনের সাহায্যে খুব সহজেই যেকেউ প্রবেশ করতে পারেন এ বিশাল মুদ্রা বাজারে। সাধারণ মানুষ এ বাজারে অংশ নেয়ার পর থেকে এ বাজারের পরিধি আরো বিস্তৃত হয়েছে।
নিচে ফরেক্স মার্কেট (FX), নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ (NYSE), টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জ (TSE) ও লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ (LSE)-এর মধ্যে গড় বেচাকেনার পরিমাণের একটি উদাহরণ গ্রাফের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো। এটি ২০১০ সালের অক্টোবর মাসের বাজারের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
গ্রাফটি বা লেখচিত্রটি থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০১০ সালে ফরেক্স মার্কেটের গড় বেচাকেনার পরিমাণ তথা অ্যাভারেজ ট্রেডিং ভলিউম ছিল ৩৯৮০০০ কোটি ডলার, নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের ৭৪০০ কোটি ডলার, টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জের ১৮০০ কোটি ডলার ও লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের ৭০০ কোটি ডলার। ফরেক্স মার্কেট নিউইয়র্ক, টোকিও ও লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ মার্কেটের চেয়ে যথাক্রমে ৫৩, ২২১ ও ৫৬৮ গুণ বড়। প্রায় ৪X১০১২ মার্কিন ডলার মূল্যের এ বিশাল বাজারে রিটেইল ট্রেডার বা খুচরো ব্যবসায়ী আমরা। আমরা যারা এখানে ছোটখাটো বিনিয়োগ করব তাদের অর্থের পরিমাণ প্রায় ১.৪৯ ট্রিলিয়ন ডলার। আকার দেখেই বুঝতে পারছেন কত বড় একটি মার্কেটে আপনি বিচরণ করার সুযোগ পাচ্ছেন।
কী বেচাকেনা হয় ফরেক্স মার্কেটে?
এতক্ষণে সবাই জেনে গেছেন ফরেক্স মার্কেটে লেনদেন হয় বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু শুধু কি বিদেশী মুদ্রাই বেচাকেনা হয় এ বাজারে? মুদ্রা ছাড়াও সোনা, রূপা ও তেলের বেচাকেনা হয় এ ফরেক্স মার্কেটে। তবে এগুলোর দামের তারতম্য খুব একটা বেশি হয় না। তাই দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয় মুদ্রা ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যম বেছে নিলে। সবার নজর মুদ্রা লেনদেনের দিকেই বেশি। কারণ, মুদ্রার বাজারে দামের ওঠানামা চলে বেশি। কোনো দেশের মুদ্রা কেনার অর্থ সে দেশের অর্থনীতির একটা শেয়ার কিনলেন আপনি। সে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হলে এবং উন্নতির দিকে গেলে আপনার লাভ হবে বেশি। আর সে দেশের অর্থনীতিতে ধস নামলে আপনার ক্ষতি। তাই অর্থনীতিবিদদের ভাষায় বলতে গেলে বলা লাগে : The eXchange rate of a currency versus other currencies is a reflection of the condition of that country’s economy, compared to other countries’ economies ।
ফরেক্স মার্কেটের প্রধান মুদ্রাগুলো
শক্তিশালী কিছু মুদ্রার বেচাকেনা বেশি হয় ফরেক্স মার্কেটে। এ শক্তিশালী কারেন্সি বা মুদ্রাগুলোকে বলা হয় মেজর কারেন্সি বা প্রধান মুদ্রা। যেমন : যুক্তরাষ্ট্রের ডলার, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইউরো, ব্রিটেনের পাউন্ড, কানাডার ডলার, অস্ট্রেলিয়ার ডলার ইত্যাদি।
কারেন্সি সিম্বল বা মুদ্রা সঙ্কেতে তিনটি অক্ষর থাকে। প্রথম দুটি দেশের নাম ও শেষেরটি সে দেশের মুদ্রার নামের প্রথম অক্ষর প্রকাশ করে। যেমন : USD হচ্ছে মার্কিন ডলারের সঙ্কেত। এখানে US দিয়ে United States এবং D দিয়ে Doller বোঝাচ্ছে। একইভাবে বাংলাদেশের সংক্ষিপ্ত নাম BD, কারেন্সি হচ্ছে Taka আর আমাদের দেশীয় মুদ্রার সঙ্কেত হচ্ছে BDT। মজার ব্যাপার হচ্ছে ডলারের আরো অনেক নাম রয়েছে, যেমন : greenbacks, bones, benjis, benjamins, cheddar, paper, loot, scrilla, cheese, bread, moolah, dead presidents Ges cash money। এছাড়াও পেরুতে ডলারের নিকনেম বা ডাকনাম হচ্ছে কোকো।
কারেন্সি পেয়ার
ফরেক্সে একটি মুদ্রা কেনা হয় আরেকটি বেচা হয়। তাই এখানে দুটি মুদ্রার কারবার হচ্ছে। মুদ্রার এ বেচাকেনার কাজ করবে ব্রোকার বা ডিলার, একটি মুদ্রাজোড়ের বা কারেন্সি পেয়ারের ওপর ভিত্তি করে। ব্যাপারটা আরেকটু ব্যাখ্যা করা যাক, শেয়ার মার্কেটের নিয়ম হচ্ছে যেকোনো শেয়ারের মূল্য সে দেশের মুদ্রার বিপরীতে নির্ধারিত হবে। যেমন- বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেটে কোনো শেয়ারের মূল্য ধরা হয় টাকায়। কিন্তু ফরেক্স মার্কেটে এভাবে কোনো দেশের মুদ্রা বা কারেন্সির মান নির্ধারণ অসম্ভব। শুধু ইউরো বা ডলারের কোনো মূল্য থাকতে পারে না। যেমন- ১ ডলার দিয়ে ৭৪ বাংলাদেশী টাকা পাওয়া যায়। একইভাবে ১ ডলার দিয়ে মাত্র ০.৬৯ ইউরো অথবা ০.৬১ ব্রিটিশ পাউন্ড পাওয়া সম্ভব। আবার যদি ভারতের রুপির কথা ধরা হয়, তাহলে ১ ডলার দিয়ে আপনি ৪৫ রুপি পাবেন। তাহলে ডলারের মূল্য আসলে কোনটি? বিভিন্ন দেশের মানুষই তো ফরেক্স মার্কেটে ট্রেড করে, কোন দামে তারা ডলার কিনবে? এ জন্যই ফরেক্স মার্কেটে সবকিছু কারেন্সি পেয়ারের মাধ্যমে ট্রেড হয়। মার্কিন ডলার ও ইউরোর মুদ্রাজোড় হচ্ছে USD/EUR এবং ব্রিটিশ পাউন্ড ও জাপানি ইয়েনের জোড় হচ্ছে GBP/JPY।
ফরেক্সের বাজারে তাই মুদ্রাজোড়ের ভূমিকা অনেক এবং বেচাকেনার সময় যেকোনো জোড়কে বেছে নিতে পারেন। মুদ্রার মাঝে এ প্রতিযোগিতাকে টাগ অব ওয়ারের সাথে তুলনা করতে পারেন। যে কারেন্সি যত বেশি শক্তিশালী হবে অপর পক্ষের কারেন্সি তত দুর্বল।
ফরেক্সে কারেন্সির এ জোড়কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
এগুলো হচ্ছে :
০১. প্রধান মুদ্রাজোড় (মেজর কারেন্সি পেয়ার);
০২. গৌণ মুদ্রাজোড় (মাইনর/ক্রস-কারেন্সি পেয়ার);
০৩. এক্সোটিক মুদ্রাজোড় (এক্সোটিক পেয়ার)।
প্রধান মুদ্রাজোড় :
প্রধান মুদ্রাজোড়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাতে মার্কিন ডলারের উপস্থিতি। মার্কিন ডলারের সাথে অন্যান্য বহুল ব্যবহৃত শক্তিশালী মুদ্রাজোড়কেই বলা হয় প্রধান মুদ্রাজোড়। এখানে প্রধান কারেন্সি পেয়ারগুলোর নাম, দেশ ও ফরেক্সের ভাষায় তাদের নাম তালিকাভুক্ত করা হলো-
গৌণ মুদ্রাজোড় :
মার্কিন ডলার বাদে অন্যান্য প্রধান কারেন্সির মাঝে যে জোড় বা ক্রস হয় সেগুলোকে গৌণ বা অপ্রধান মুদ্রাজোড় বলে। ইংরেজিতে এদের ক্রস কারেন্সি পেয়ার বলা হয়। সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রস পেয়ারগুলো সাধারণত ইউরো, ব্রিটিশ পাউন্ড, জাপানি ইয়েনের মাঝে দেখা যায়। ইউরোকে প্রথমে বা বেস কারেন্সি হিসেবে রেখে তার সাথে অন্য কোনো মুদ্রার ক্রস করা হলে বা জোড়া বানানো হলে তাকে উইরো ক্রস বলে। এভাবেই ইয়েন ক্রস, পাউন্ড ক্রস ও অন্যান্য ক্রস হতে পারে। ইয়েন ক্রসের ক্ষেত্রে ইউরো/ইয়েন এবং পাউন্ড/ইয়েন মুদ্রাজোড়ের ডাকনাম যথাক্রমে ইয়ুপ্পি ও গুপ্পি। নিচের ছকে ইউরো ক্রসের উদাহরণ তুলে ধরা হলো-
এক্সোটিক পেয়ার :
এক্সোটিক পেয়ারের বেলায় একটি প্রধান কারেন্সির সাথে কম শক্তিশালী বা ধীরে ধীরে শক্তিশালী হতে থাকা কোনো কারেন্সির সাথে যে পেয়ার বা জোড় করা হয় তাকে এক্সোটিক পেয়ার বলে। কম শক্তিশালী কারেন্সির মধ্যে রয়েছে মেক্সিকোর পেসো, ডেনমার্কের ক্রোন, থাইল্যান্ডের বাথ, বাংলাদেশের টাকা, ভারতের রুপি ইত্যাদি। জোড় বানানোর ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় প্রধান কারেন্সি হিসেবে মার্কিন ডলার থাকে। এ ধরনের পেয়ার দিয়ে তেমন একটা ট্রেড হয় না। প্রধান কারেন্সি পেয়ার ও ক্রস পেয়ারগুলো নিয়েই বেশি মাতামাতি হয়ে থাকে। নিচে কিছু এক্সোটিক পেয়ারের উদাহরণ দেয়া হলো-
কারেন্সি ডিস্ট্রিবিউশন
ফরেক্স মার্কেটে লেনদেনে মুদ্রা হিসেবে মধ্যমণি হয়ে আছে মার্কিন ডলার। ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী ফরেক্স বাজারে ডলারের ট্রানজেকশন হয়েছে প্রায় ৮৪.৯%। এরপর দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ স্থানে ছিল যথাক্রমে ইউরো (৩৯.১%), ইয়েন (১৯.০%) ও পাউন্ড (১২.৯%)। নিচে একটি গ্রাফ দেয়া হলো, যাতে ফরেক্স মার্কেটের কারেন্সি ডিস্ট্রিবিউশনের সহজ একটি চিত্র দেয়া আছে।
কারেন্সির রাজা ডলার
ফরেক্স মার্কেটে ডলার আধিপত্য বিস্তার করে আছে শুরুর দিক থেকেই। বেশিরভাগ প্রধান কারেন্সি পেয়ারে ডলারের উপস্থিতি ডলারের আধিপত্যকে আরো শক্তিশালী করে তুলছে। ফরেক্স রিজার্ভে কারেন্সি কম্পোজিশনের কথা চিন্তা করলে ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী দেখা যায় ডলারের পরিমাণ ৬২%। তাই কারেন্সির রাজা হিসেবে ডলারকে অভিহিত করাই যায়। চিত্রটিতে চোখ বুলালেই কারেন্সি কম্পোজিশনে ফরেক্স রিজার্ভে বাকি কারেন্সিগুলোর অবস্থান জানা যাবে।
ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড বা আইএমএফের ভাষ্যমতে, পৃথিবীর অফিশিয়াল ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভের অর্ধেকের বেশি (প্রায় ৬২%) জুড়ে আছে মার্কিন ডলার। বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়িক কোম্পানি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবাই ডলারের সাহায্যে লেনদেন করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ফরেক্স মার্কেটে মার্কিন ডলারের মুখ্য ভূমিকা পালন করার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে : ০১. যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অর্থনীতি; ০২. মার্কিন ডলার পৃথিবীর সব দেশের রিজার্ভ কারেন্সি; ০৩. আমেরিকার রয়েছে সবচেয়ে বড় লিকুইড ফিনান্সিয়াল মার্কেট; ০৪. যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অবস্থা বেশ মজবুত; ০৫. মিলিটারি শক্তির দিক থেকেও আমেরিকার অবস্থান শীর্ষে; ০৬. মার্কিন ডলার বেশিরভাগ ব্যবসায়িক লেনদেনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন- বাংলাদেশ যদি কোনো আরব দেশের কাছ থেকে তেল কিনতে চায় তবে তা টাকা দিয়ে কেনা যাবে না। তেল কেনার জন্য টাকাকে ডলারে রূপান্তরিত করে নিতে হবে। অর্থাৎ টাকা বিক্রি করে ডলার কিনতে হবে, তারপর তা দিয়ে তেল কিনে নিতে হবে।
ফরেক্স করবেন কেন?
ফরেক্স ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য কী এবং কেনো ব্যবসায়ে নামবেন তা জেনে নেয়া যাক : ০১. এতে কোনো ক্লিয়ারিং ফি, এক্সচেঞ্জ ফি, সরকারি ফি এবং সর্বোপরি কোনোরকমের ব্রোকারেজ ফি দিতে হয় না; ০২. মার্কেটে লেনদেনের মাঝে কোনো মধ্যস্থতাকারী নেই; ০৩. লটের আকারের কোনো নির্দিষ্টতা নেই; ০৪. রিটেইল ট্রানজেকশন কস্ট বা বিড/আস্ক স্প্রেড সাধারণত বেশ কম, যা ০.১ শতাংশের নিচে থাকে। বড় ডিলারদের ক্ষেত্রে তা ০.০৭% পর্যন্ত হতে পারে; ০৫. সপ্তাহের ৫ দিনে ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে এ বাজার; ০৬. মার্কেট এত বড় যে, কোনো সেন্ট্রাল ব্যাংকেরও ক্ষমতা নেই ফরেক্স মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করার; ০৭. লেভারেজ বা লোন পাওয়ার সুবিধা; ০৮. বাজারে বেশ তারল্য বিদ্যমান; ০৯. নতুন ও কম পুঁজির ট্রেডারদের জন্য মাইক্রো ও মিনি ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন, যা ১ ডলার থেকে শুরু এবং ১০. অ্যাকাউন্ট খোলা, সফটওয়্যার, পরামর্শ ও সাহায্য সবকিছুই সহজলভ্য ও তার জন্য কোনো মূল্য দিতে হয় না।
ফরেক্স বনাম শেয়ার মার্কেট
নিউইয়র্ক স্টক মার্কেটের কথা চিন্তা করলে দেখা যায়, সেখানে স্টকের সংখ্যা সাড়ে ৪ হাজার। এত স্টকের ওপর নজর রাখা এবং সেগুলো নিয়ে সমীক্ষা চালিয়ে কতটা ঝামেলার কাজ, তা সহজেই অনুমেয়। ফরেক্স মার্কেটেও রয়েছে কয়েক ডজন কারেন্সি পেয়ার, কিন্তু বেশি লেনদেন হয়ে থাকে প্রধান কারেন্সি পেয়ারগুলোর মধ্যে। তাই ৪-৫টি প্রধান কারেন্সি পেয়ারের দিকে নজর রাখার ব্যাপারটা খুব যে কঠিন তা কিন্তু নয়। আসুন দেখা যাক, ফরেক্সের সাথে স্টক মার্কেটের পার্থক্য :
ছকে উল্লিখিত পার্থক্য দেখে ফরেক্সকেই এগিয়ে রাখতে হচ্ছে। কারণ, স্টক মার্কেটের তুলনায় ফরেক্স অনেক বড় ও অনেক বেশি সুবিধাজনক।
ফরেক্স মার্কেটের গঠন
স্টক মার্কেটের একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান থাকে। স্টক মার্কেট একটি কেন্দ্রায়িত বাজার। কিন্তু ফরেক্স মার্কেট বিকেন্দ্রায়িত বাজার। এর কোনো কেন্দ্রীয় বাজার নেই। ফরেক্স মার্কেট হায়ারাকি হচ্ছে- প্রধান ব্যাংকগুলো ইলেকট্রনিক ব্রোকিং সার্ভিসে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যাংকগুলো রিটেইল মার্কেট মেকারস এবং কমার্শিয়াল কোম্পানিগুলো রিটেইল ট্রেডারস। মার্কেটের খেলোয়াড় হিসেবে কাজ করে বড় আকারের ব্যাংকগুলো, কমার্শিয়াল কোম্পানি, সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং একক বিনিয়োগকারী।
ফরেক্সের ইতিহাস
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পশ্চিমা দেশের সরকারগুলো বৈশ্বিক অর্থনীতিতে স্থিরতা আনার প্রয়োজন উপলব্ধি করে। তখন ১৯৭১ সালের দিকে ব্রিটন উডস সিস্টেম চালু হয়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন কারেন্সির বদলে স্বর্ণ ব্যবহার করা হয় এক্সচেঞ্জ রেটের অস্থিরতা কমাতে। কিন্তু তাতে এক্সচেঞ্জ রেটের অস্থিরতা কমলেও ফেয়ার একচেঞ্জ রেট বের করাটা কঠিন হয়ে পড়ে। পরে কমপিউটার ও নেটওয়ার্কের উন্নতির ফলে ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব ট্রেডিং প্লাটফর্ম বানাতে শুরু করে। ১৯৯০ সাল থেকে অনেক ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান তাদের ট্রেডিং প্লাটফর্ম হিসেবে ইন্টারনেটকে বেছে নেয়। এরপর থেকেই শুরু ফরেক্সের যাত্রা। ফরেক্সের চর্চা অনেক দিন ধরেই হয়ে আসছে, কিন্তু আমাদের দেশে তা নতুনই বলা চলে। কারণ, অনেকেই এ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না।
ফরেক্স সম্পর্কিত কিছু পদবাচ্য
ফরেক্সে বেশ কিছু শব্দ বা পদবাচ্য রয়েছে, যার অর্থ নতুনদের জন্য বোঝা কঠিন। তাই ফরেক্সের সাথে যুক্ত শব্দগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে ফরেক্সে আসা উচিত নয়। ফরেক্স বোঝার জন্য এসব শব্দের গুরুত্ব অপরিসীম। ফরেক্সে অনেক টার্ম বা পদবাচ্য আছে, যা কাজ করতে করতে আপনি জানতে পারবেন। কিন্তু যে টার্ম বা শব্দগুলো জানা না থাকলেই নয়, সেগুলো নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
কারেন্সি পেয়ার :
কারেন্সি পেয়ার নিয়ে এখানে আগেই বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তবে এখানে সহজ কিছু উদাহরণের ব্যাপারটি আরো স্পষ্ট করে তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে। আগেই জেনেছি কারেন্সি পেয়ারগুলোকে কিভাবে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। যেমন : মার্কিন ডলার ও ইউরোর কারেন্সি পেয়ারের সঙ্কেত হচ্ছে USD/EUR। এখন যদি লেখা থাকে ১ USD/EUR = ০.৬৯৩০, তাহলে বুঝতে হবে ১ ডলার দিয়ে আপনি পাবেন ০.৬৯৩০ ইউরো। বিপরীতভাবে যদি লেখা থাকে ১ EUR/USD = ১.৪৪২৮, তাহলে বুঝতে হবে ১ ইউরো দিয়ে কেনা যাবে ১.৪৪২৮ ডলার।
পিপস :
ওপরের কারেন্সি পেয়ারের ব্যাখ্যায় কারেন্সি পেয়ার রেটের বেলায় দশমিকের পরে চার ঘর পর্যন্ত সংখ্যা রাখা হয়েছে। অনেকের মাথায় আসতে পারে এত সূক্ষ্ম করে লেখার কী দরকার? যারা শেয়ার ব্যবসায় করেন, তাদের প্রশ্ন হতে পারে শেয়ারের মূল্য সাধারণত পূর্ণ সংখ্যায় থাকে, যেমন : শেয়ারের মূল্য ৫০ টাকা হতে পারে বা ১০০০ টাকা হয়ে থাকে? খুব কমই শেয়ার দেখা যায় যার মূল্য দশমিক পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু ফরেক্সের বেলায় এত সূক্ষ্ম হিসাবের কী প্রয়োজন? এক্ষেত্রে বলা যায়, শেয়ার হচ্ছে দুটি কারেন্সির অনুপাত, তাই এখানে মুদ্রার মূল্যমানের সূক্ষ্ম পার্থক্যটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শেয়ার বাজারে আমরা এমনভাবে হিসাব করি না যে, গ্রামীণফোনের শেয়ারের বদলে কতগুলো এয়ারটেলের শেয়ার পাব। শেয়ার বাজারে শেয়ারের মূল্যাটাই আসল, যার দাম সাধারণত পূর্ণ সংখ্যায় হয়ে থাকে।
ফরেক্স মার্কেটে দশমিকের পর ৪ ঘর পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। কারণ কারেন্সি এক্সচেঞ্জ রেটের হেরফের বেশি লক্ষ করা যায় দশমিকের পরে তৃতীয় ও চতুর্থ ঘরে। কোনো দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার বড় কোনো পরিবর্তন না হলে দশমিকের পরে প্রথম ঘরের পরিবর্তন সাধারণত দেখা যায় না। ২-৩ দিন বা এক সপ্তাহের বাজার পর্যালোচনা করলে দশমিকের পরের দ্বিতীয় ঘরে পরিবর্তন দেখা যায়। পিপস সম্পর্কে বেশ ভালো জ্ঞান রাখা উচিত। তা না হলে ফরেক্স শেখাটা বেশ কঠিন হয়ে যাবে।
একটি সহজ উদাহরণ দেখা যাক, আগস্ট ২০১১ সালের ১১ তারিখ থেকে ১৮ তারিখ মোট ৮ দিনের হিসাব ডলার/ইউরো এক্সচেঞ্জ রেট নিচের ছকে দেয়া হলো :
এ ছক থেকে দেখা যাচ্ছে, ১১-১৪ তারিখ পর্যন্ত দশমিকের পরের তৃতীয় ও চতুর্থ ঘরে পরিবর্তন হয়েছে। ১৫ তারিখে এসে দশমিকের পরের ঘরে ৬ বেড়ে ৭-এর ঘরে গেছে এবং ১৫-১৮ তারিখ পর্যন্ত তা বহাল থেকেছে। ১৫-১৮ পর্যন্ত আবারো দশমিকের পরের তৃতীয় ও চতুর্থ ঘরেই মানের হেরফের হয়েছে। দশমিকের পরের চতুর্থ সংখ্যাটিকে বলা হয় পিপ (Pip)। অর্থাৎ ০.৬৯৮১ সংখ্যার মধ্যে ১ হচ্ছে পিপ। যেহেতু তৃতীয় ও চতুর্থ ঘরের মাঝে বেশি পরিবর্তন হয়ে থাকে, তাই এ দুটি সংখ্যাকে বেশি হিসাব করা হয়। তাই একসাথে এ দুটি সংখ্যাকে (আরো বেশি সংখ্যাও হতে পারে) বহুবচনে পিপস (Pips) বলা হয়। অর্থাৎ ০.৬৯৮১ সংখ্যাতে পিপস হচ্ছে ৮১ বা ৯৮১ বা ৬৯৮১।
আমরা ১৭ ও ১৮ তারিখের এক্সচেঞ্জ রেটের মধ্যে পার্থক্য করলে পাব (০.৬৯৮১-০.৬৯৩০) = ০.০০৫১। এ পার্থক্যকে ফরেক্সের ভাষায় বলতে হবে ১৭-১৮ তারিখের মধ্যে মার্কেট ৫১ পিপস মুভ করেছে বা পরিবর্তিত হয়েছে। পিপসকে পয়েন্ট হিসেবেও অভিহিত করা হয়ে থাকে, তবে পিপস নামটিই বেশি জনপ্রিয়। পিপসের এ পরিবর্তন কয়েক মিনিটের মধ্যে হতে পারে বা আরো বেশি সময় লাগতে পারে।
ব্রোকার :
শেয়ার ব্যবসার সাথে যারা জড়িত তারা এবং ডলার বা অন্য দেশীয় মুদ্রা ভাঙ্গিয়েছেন তারা এ শব্দটির সাথে পরিচিত। ফরেক্সে ব্রোকার হচ্ছে আপনার পক্ষে কারেন্সি কেনাবেচার কাজ যে করবে সে। এটি সাধারণত একটি প্রতিষ্ঠান, যা ডলার এক্সচেঞ্জের কাজ করবে। অনলাইনে এরকম ভালো ব্রোকার কোম্পানি খুঁজে তাদের কোম্পানিতে আপনার অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। সে অ্যাকাউন্টে আপনার পুঁজি ডিপোজিট করতে হবে, যা দিয়ে আপনি ব্যবসায় শুরু করতে চান। তারা সে ডিপোজিটকৃত টাকা থেকে আপনার পক্ষ হয়ে কারেন্সি লেনদেন করবে। বাজারে হাজারো ব্রোকার কোম্পানি আছে। তাই এর মধ্য থেকে ভালো ব্রোকার খুঁজে বের করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তবে কিছু উপায় আছে ভালো ব্রোকার চেনার, সেগুলো জানতে হবে।
লেভারেজ :
ফরেক্সের লেভারেজ আর শেয়ারের লোন প্রায় একই বিষয়। তবে শেয়ারে দ্বিগুণের বেশি লোন দেয়া হয় না। কিন্তু ফরেক্সে আপনার পুঁজির ১০০০ গুণ বেশি পর্যন্ত লোন বা লেভারেজ পাওয়া সম্ভব। লেভারেজ ১:২০০ বলতে বোঝায় মূল পুঁজির ২০০ গুণ লেভারেজ। যদি আপনার অ্যাকাউন্টে ১০০ ডলার থাকে এবং আপনি ব্রোকার প্রদত্ত ১:১০০ লেভারেজ সুবিধা গ্রহণ করেন, তবে আপনার পুঁজি ১০০ ডলার, কিন্তু আপনি বিনিয়োগ করলেন ১০০০০ ডলার সমমূল্যের ট্রেড। লেভারেজ ব্যবহার করলে লাভ বা ক্ষতির পরিমাণ বেশি করা সম্ভব। কম অর্থ বিনিয়োগ করে লেভারেজ প্রয়োগ করে যেমন বেশি টাকা কামানো সম্ভব, তেমনি সব খুইয়ে অ্যাকাউন্ট শূন্য বানানোও সম্ভব। তাই বিজ্ঞদের পরামর্শ, বেশি লোভ না করে ১:১০০ বা ১:২০০ লেভারেজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা। আরো ভালো হয় লেভারেজ না নিয়ে কাজ করতে পারলে।
এক্সচেঞ্জ রেট :
এক্সচেঞ্জ রেট হচ্ছে একটি কারেন্সির সাপেক্ষে আরেকটি কারেন্সির দামের অনুপাত। USD/EUR-র এক্সচেঞ্জ রেট নির্দেশ করে কত মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ১ ইউরো কেনা যাবে। ঘুরিয়ে বললে বলা যায়, ১ মার্কিন ডলার কিনতে কত ইউরো প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ : ১ USD/EUR = ০.৬৯৮১ বলতে বোঝায় ১ ডলার কেনার জন্য প্রয়োজন হবে ০.৬৯৮১ ইউরো। উল্টোভাবে বললে, ১ ইউরো কেনার জন্য লাগবে (১/.০৬৯৮১) = ১.৪৩২৪ মার্কিন ডলার। এক্সচেঞ্জ বাড়া বা কমার সাথে লাভ-লোকসানের পরিমাণ বের করা যায়।
আরো অনেক শব্দ রয়েছে ফরেক্সের, যা ফরেক্স শেখার সময় দেখা যাবে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে : Bank Rate, Flat, Gap, Liquidity, Lot, Margin, Margin Account, Margin Call, Margin Order, Momentum, Moving Average, Offer, Order, Pivot Point, Scalping, Resistance, Settled Position, Slippage, Spread, Swap, Trend ইত্যাদি। এগুলো ইন্টারনেট ঘেঁটে শিখে নিন কাজে দেবে।
কখন করবেন ফরেক্স?
ফরেক্স মার্কেট খোলা থাকে ২৪ ঘণ্টাই। তাই দিনে হোক আর রাতেই হোক, আপনি অনায়াসে আপনার লেনদেন চালাতে পারবেন। তবে সপ্তাহের শুধু পাঁচ দিন। শনি ও রবিবার এ মার্কেটে লেনদেন বন্ধ থাকে। সোমবার সকাল থেকে লেনদেন শুরু হয় এবং তা বন্ধ হয়ে যায় শুক্রবার রাতে। সময়ের ব্যাপারটি সহজ মনে হলেও তা কিন্ত সহজ নয়। কারণ, একেক দেশের সময়ের মাঝে ব্যবধান রয়েছে। তাই ট্রেডিং টাইমের কিছুটা হেরফের হবে অবস্থানগত কারণে। গ্রীষ্মকাল ও শীতকালে ফরেক্স বাজারে সময়ের বেশ তারতম্য হয়। পাঠকদের সুবিধার্থে নিচে দুটি ছকের সাহায্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টাইম জোনের ফরেক্স ট্রেডিং টাইমের হেরফের দেখানো হলো। প্রথম ছকটি গ্রীষ্মকালীন ও দ্বিতীয়টি শীতকালীন।
ফরেক্সের ভাষায়, মার্কেট খোলা ও বন্ধের সময়কালকে সেশন হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ওপরের ছক ভালো করে লক্ষ করে দেখুন, রাত ৩:০০-৪:০০টায় ইস্টার্ন ডেলাইট টাইম অনুযায়ী টোকিও সেশন এবং লন্ডন সেশন ওভারল্যাপ করে। আবার একইভাবে সকাল ৮:০০-১২:০০টায় ইস্টার্ন ডেলাইট টাইম লন্ডন সেশন ও নিউইয়র্ক সেশন ওভারল্যাপ করে। ওভারল্যাপ করা সেশনে মার্কেট বেশি ব্যস্ত থাকে। কারণ একই সময়ে দুটি মার্কেট এখানে একযোগে কাজ শুরু করে। ফরেক্স মার্কেটে নিজের স্থান শক্তভাবে ধরে রাখতে চাইলে ফরেক্স সেশন, সেশন ওভারল্যাপ, বিভিন্ন বড় টাইম জোনের সেশন, নিজে যে স্থান থেকে কাজ করবেন সে স্থানের সেশনের বিস্তারিতসহ সব কিছু নিয়ে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে।
ফরেক্স ট্রেডিংয়ের উপযুক্ত সময়
০১. যখন দুটি মার্কেট সেশন ওভারল্যাপ করবে তখন;
০২. অন্য বড় সেশনগুলোর তুলনায় ইউরোপিয়ান সেশন যখন বেশি ব্যস্ত থাকবে এবং
০৩. সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে। কারণ, এ সময় এ বাজারে আলোড়ন সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে এবং মুদ্রার মানের ওঠা-নামায় বেশ তারতম্য দেখা দেয়।
ফরেক্স ট্রেডিংয়ের খারাপ সময়
০১. রোববার- কারণ ছুটির দিনে সবাই নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে বা ঘুরে বেড়াচ্ছে;
০২. শুক্রবার- কারণ সেশনের শেষের দিকে বাজার কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ে;
০৩. ছুটির দিন- এ ব্যাপারে আর নাইবা বললাম;
০৪. বড় কোনো ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এমন সময় যেমন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা দুনিয়া কাঁপিয়ে দেয়া চাঞ্চল্যকর কোনো ঘটনা এবং
০৫. আমেরিকান আইডল, এনবিএ ফাইনাল, ফিফা, ওয়ার্ল্ড কাপ ক্রিকেট, অলিম্পিক ইত্যাদি চলার সময়।
ফরেক্স মার্কেটের সময়ের এ সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য রয়েছে অনেক ধরনের সফটওয়্যার। সফটওয়্যারগুলো ফরেক্স মার্কেট আওয়ারস মনিটর নামে পরিচিত। এ ধরনের একটি সফটওয়্যার নামিয়ে বিভিন্ন দেশের সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সে দেশের মুদ্রা নিয়ে এ ব্যবসায় করতে পারবেন। আরো ভালো হয় নির্দিষ্ট কিছু দেশের টাইমটেবিল জেনে তার একটি তালিকা বানিয়ে তা সংরক্ষণ করা এবং প্রয়োজনে তার সাহায্য নেয়া।
কিভাবে আয় করা যায়?
বিভিন্ন দেশের মুদ্রার মান সব সময় একই রকম থাকে না, তা সময়ের সাথে এবং দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তিত হয়। যেমন : কয়েক বছর আগে ১ মার্কিন ডলারের সমান ছিল ৭০ টাকা। এখন তা বেড়ে ৭৪ টাকার মতো হয়েছে। কিছুদিন পর তা আরো বাড়তে পারে বা তার চেয়ে কমে যেতে পারে। টাকার মান ওঠা-নামার সাথে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা জড়িত। ফরেক্সের ভাষায়, অর্থের মানের এ তারতম্যকে বলতে গেলে বলতে হবে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমা মানে ডলার টাকার চেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে। আর টাকার মূল্যমান বাড়ার অর্থ হচ্ছে ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হচ্ছে। টাকা এখনো ফরেক্সের বাজারে নিজের স্থান শক্ত করে নেয়নি। ফরেক্সের বাজারের প্রধান মুদ্রাগুলো হলো : মার্কিন ডলার, ইউরো, ব্রিটিশ পাউন্ড, জাপানি ইয়েন, কানাডিয়ান ডলার, অস্ট্রেলিয়ান ডলার ইত্যাদি।
মনে করুন, আপনার কাছে ১০০ মার্কিন ডলার আছে। তা দিয়ে আপনি ৭০ ইউরো নিলেন। তার অর্থ হচ্ছে আপনি ১০০ ডলার বিক্রি করলেন এবং ৭০ ইউরো কিনলেন। কিছুদিন বা কিছু সময় পর ডলারের বিপরীতে ইউরোর দাম বেড়ে গেলে আপনি তা বিক্রি করে দিয়ে আগের চেয়ে বেশি ডলার পেলেন। ১০০ ডলারের সাথে ইউরোর লেনদেন করে বাড়তি যে ডলার আপনি আয় করলেন সেটাই আপনার লাভ। এভাবেই আপনি ফরেক্সে আয় করতে পারবেন। শেয়ার মার্কেটের বেলায় শুধু শেয়ারের দাম বাড়লেই লাভ করার সুযোগ থাকে, নতুবা নয়। কিন্তু ফরেক্স মার্কেটে মুদ্রার মান বাড়ুক বা কমুক অর্থাৎ শক্তিশালী হোক বা দুর্বল হোক, দুই ক্ষেত্রেই আপনি লাভ করার সুযোগ পাবেন। কারণ একটি মুদ্রার বিপরীতে আরেকটির মান বাড়বে বা কমবে।
ফরেক্সে লাভক্ষতির হিসাব
ফরেক্স মার্কেটে ট্রেড ওপেন বা খোলার এবং তা ক্লোজ বা বন্ধ করার পদ্ধতি বেশ সোজা। শুধু মাউস দিয়ে ক্লিক করেই তা অনায়াসে করতে পারবেন। কিন্তু কোন ট্রেডটি খুলবেন এবং কখন তা বন্ধ করবেন সে ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়াটা কঠিন। স্টক মার্কেট বা শেয়ার মার্কেটে ট্রেড করার অভিজ্ঞতা থাকলে এ ব্যাপারে আপনার তেমন একটা অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এখন দেখা যাক কিভাবে লাভ-লোকসান হয় ফরেক্স মার্কেটে।
মনে করুন, ১ ইউরো/মার্কিন ডলার = ১.৪২০০ এক্সচেঞ্জ রেটে (১ EUR/USD = ১.৪২০০) আপনি ১০০০ ইউরো কিনলেন ১৪২০.০ মার্কিন ডলার দিয়ে। দুই-তিন দিন পর বা এক সপ্তাহ পর এক্সচেঞ্জ বেড়ে হলো ১.৪৫০০। এক্সচেঞ্জ রেট বাড়ায় কিনে রাখা ১০০০ ইউরো আপনি বিক্রি করে দিলেন ১৪৫০.০ মার্কিন ডলারে। তাহলে আপনার লাভ হলো ১৪৫০-১৪২০ = ৩০ মার্কিন ডলার। এভাবে আপনি ১০০০ ইউরোর বদলে যদি ১০০০০০ ইউরো কিনতেন, তাহলে লাভের পরিমাণ হতো ৩০০০ মার্কিন ডলার। অপরদিকে কারেন্সি কেনার পর এক্সচেঞ্জ রেট যদি কমে যায়, তখন আপনার লোকসান হবে।
ফরেক্স কোটেশন পড়ার নিয়ম
ফরেক্স ট্রেডিংয়ের সময়ে প্রতিটি ট্রেডে একটি কারেন্সি কিনতে হয় এবং আরেকটি বিক্রি করতে হয়। এক্সচেঞ্জ রেটের দিকে বেশ খেয়াল রাখতে হয় প্রতিটি ট্রেড ওপেন করার পর। এক্সচেঞ্জ রেট ও কারেন্সি পেয়ার একটি নির্দিষ্ট ফরমেটে লেখা হয়, একে ফরেক্স কোটেশন বলে। সংক্ষেপে বলতে গেলে ইউএসডলার/ইউরো = ০.৬৯৮১ হচ্ছে একটি ফরেক্স কোটেশন। এখানে স্ল্যাশ (/)-এর আগে থাকা কারেন্সি বা ইউএসডলার (মার্কিন ডলার) হচ্ছে বেস (Base) কারেন্সি এবং স্ল্যাশের পরের কারেন্সি বা ইউরো হচ্ছে কুওট (Quote) কারেন্সি।
ফরেক্সে লং/শর্ট, বিড/আস্ক, বাই/সেল ইত্যাদি আরো কিছু টার্ম দেখতে পাবেন। এগুলোকে কি বোঝায়?
বাই/সেল (Buy/Sell) :
ট্রেড করার সময় কারেন্সি বাই ও সেল করতে হবে। তাই কেনার সময় এক্সচেঞ্জ রেট নির্দেশ করে ১ ইউনিট বেস কারেন্সি কেনার জন্য কত ইউনিট কুওট কারেন্সি দিতে হবে। ১ ইউএস ডলার/ইউরো = ০.৬৯৮১-এর ক্ষেত্রে ১ ডলার কেনার জন্য দিতে হবে ০.৬৯৮১ ইউরো।
বিক্রি করার সময় এক্সচেঞ্জ রেট নির্দেশ করে ১ ইউনিট বেস কারেন্সি বিক্রি করলে কত ইউনিট কুওট কারেন্সি পাওয়া যাবে। ১ ইউএস ডলার/ইউরো = ০.৬৯৮১-এর ক্ষেত্রে ১ ডলার বিক্রি করলে পাওয়া যাবে ০.৬৯৮১ ইউরো।
বেস কারেন্সি হলো বাই ও সেলের মূল ভিত্তি। যদি আপনি ইউএসডলার/ইউরো বাই করেন, তবে আপনি বেস কারেন্সি ইউএসডলার কিনছেন এবং একই সাথে কুওট কারেন্সি ইউরো বিক্রি করছেন। সহজ কথায় ইউএসডলার কেনা, ইউরো বিক্রি করা।
আপনি একটি কারেন্সি পেয়ার বাই করবেন যখন আপনার মনে হবে যে, কুওট কারেন্সির তুলনায় বেস কারেন্সি শক্তিশালী হবে। এরপর আপনি সেল করবেন তখন, যখন আপনার মনে হবে কুওট কারেন্সির তুলনায় বেস কারেন্সি দুর্বল হয়ে যাবে।
লং/শর্ট (Long/Short) :
ট্রেড শুরু করার আগে বাই করবেন না সেল করবেন, তা ঠিক করে নিতে হবে। আপনি ঠিক করলেন বাই করবেন, তার মানে হচ্ছে আপনি বেস কারেন্সি কিনবেন এবং কুওট কারেন্সি বিক্রি করবেন। এখন বাই করার পর আপনার চাওয়া থাকবে বেস কারেন্সির দাম বেড়ে যাক, তাহলে আপনি বেশি লাভে তা বিক্রি করতে পারবেন। ফরেক্সের ভাষায় আপনি লং পজিশনে রয়েছেন। সহজভাবে মনে রাখার জন্য বলা বাই করলে তা লং পজিশন।
একইভাবে যদি আপনার ইচ্ছে হয় সেল করার অর্থাৎ বেস কারেন্সি বিক্রি করা এবং কুওট কারেন্সি কেনার। তাহলে সেল করার পর আপনার লক্ষ থাকবে বেস কারেন্সির দাম কমে গেলে, তা আপনি কিনবেন আরো কম দামে। ফরেক্সের ভাষায় আপনি আছেন শর্ট পজিশনে। শর্ট পজিশন সেলের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
বিড/আস্ক (Bid/Ask) :
ফরেক্স ট্রেডিং সফটওয়্যার ব্যবহার করার সময় দেখবেন কোটেশনে দুটি কারেন্সির মূল্য দেয়া থাকে। যে মূল্য দুটি দেয়া থাকে তাদের বিড ও আস্ক বলা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিডের মূল্য আস্কের মূল্যের চেয়ে কম হয়। অর্থাৎ বিড ছোট ও আস্ক বড়।
বিড হচ্ছে এমন একটি মূল্য, যে দামে ব্রোকার কুওট কারেন্সির পরিবর্তে বেস কারেন্সি কিনতে চায়। অর্থাৎ সেল করার জন্য বিড হলো সবচেয়ে ভালো মূল্য।
আস্ক হলো এমন একটি মূল্য, যে দামে ব্রোকার কুওট কারেন্সির পরিবর্তে বেস কারেন্সি বিক্রি করতে চায়। অর্থাৎ বাই করার জন্য আস্ক হলো সবচেয়ে ভালো মূল্য।
ডলার/ইউরো = ০.৬৯৮১ হচ্ছে বিড এবং তা বেড়ে যদি ০.৭০১০ হয় তবে তা হচ্ছে আস্ক। তাদের পার্থক্য হচ্ছে (০.৭০১০-০.৬৯৮১) = ০.০০২৯ বা ২৯ পিপস। এ পার্থক্যকে বলা হয় স্প্রেড।
ফরেক্স ট্রেডিংয়ের জন্য কী কী দরকার?
ফরেক্স ট্রেডিংয়ের জন্য তেমন একটা কিছুর প্রয়োজন হবে না। শুধু একটি কমপিউটার ও ভালোমানের ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই হবে। এমন কোনো ইন্টারনেট লাইন এ কাজে ব্যবহার করা উচিত নয়, যা যখন-তখন ডিজ্যাবল হয়ে যায়। কারণ, ট্রেডিংয়ের মোক্ষম সময়ে যদি ইন্টারনেট কানেকশনে সমস্যা হয়, আপনার অবস্থা কি দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমেয়? তেমন হাই কনফিগারেশনের পিসির প্রয়োজন নেই। কারণ, ইন্টারেন্ট ব্রাউজিং ও হালকা কিছু ট্রেডিং সফটওয়্যার চালনা ছাড়া তেমন কোনো কঠিন কাজ করতে হবে না ফরেক্স ট্রেডিং করার সময়। ঘরের বাইরে যদি বেশি সময় কাটান, তবে ব্যবহার করতে পারেন ইন্টারনেট কানেকশনসহ একটি ল্যাপটপ বা উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমচালিত মোবাইল। আরো লাগবে কিছুটা পুঁজি বা মূলধন, যা দিয়ে আপনি ট্রেডিং শুরু করবেন। তার পরিমাণ ন্যূনতম ১ মার্কিন ডলার হতে হবে। এরপর থাকতে হবে একজন ব্রোকার যে আপনার পক্ষে মুদ্রা কেনাবেচার কাজ করবে, ঠিক যেমনভাবে শেয়ার বাজারে ব্রোকার আপনার জন্য শেয়ার বেচাকেনা করে দেয়। অনলাইনে অনেক ব্রোকার আছে, তাই এ নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। ভালো কিছু ব্রোকারের মধ্যে রয়েছে : Hot ForeX, Trading Point, Delta Stock AD, eToro, Fast Brokers, Tadawul FX, MB Trading, Windsor Brokers ইত্যাদি। ভালো ব্রোকারের কিছু বৈশিষ্ট্যের মধ্যে আছে : কম টাকায় অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা রাখা, কম বিনিয়োগে ট্রেডিং করার সুবিধা দেয়া, স্প্রেডের পরিমাণ কম হওয়া, অর্ডার খুব দ্রুত নিষ্পন্ন করার সুবিধা, ভালো সাপোর্ট, অনেক ক্যাটাগরির লেভারেজ সুবিধা রাখা ইত্যাদি।
ফরেক্সে ক্যারিয়ার
ফরেক্সে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ আছে। ফুল টাইম জব হিসেবে অনেকেই ফরেক্সে কাজ করছেন। বিভিন্ন বিদেশী প্রতিষ্ঠান তাদের পক্ষ হয়ে ট্রেডিং পরিচালনা করার জন্য দক্ষ ট্রেডার নিয়োজিত করে থাকে। তাদের বেতন আকাশচুম্বী। হাজার ডলারেরও বেশি তাদের বেতন। ফরেক্সে ভালো ট্রেডার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারলে দেশে বসেই বিদেশী প্রতিষ্ঠানের জন্য ফরেক্স ট্রেডিং করে আয় করতে পারেন বিশাল অঙ্কের টাকা। ব্রোকার কোম্পানিগুলোতেও আছে কাজ করার সুযোগ। তবে আমাদের দেশের এখনো ভালো কোনো ফরেক্স ব্রোকারেজ হাউস গড়ে ওঠেনি। আমাদের পার্শববর্তী দেশ ভারতে বেশ কয়েকটি এ ধরনের ফার্ম গড়ে উঠেছে।
ফরেক্সে কাজের কৌশল
ফরেক্সে কাজ করে টিকে থাকার জন্য বেশ কিছু কৌশল প্রয়োগ করতে হয়। সেজন্য ট্রেড শুরু করার আগে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে :
০১. কোন কারেন্সি পেয়ার নিয়ে আপনি ট্রেড করবেন?
০২. কতটুকু রিস্ক নেবেন?
০৩. লেভারেজ নেবেন কি নেবেন না?
০৪. কতটুকু লাভ করতে চান?
০৫. কত বিনিয়োগ করবেন?
সিদ্ধান্ত নেয়ার পরপর ট্রেড শুরু করার আগেই যা আপনার কিছু করার আছে তা হচ্ছে :
০১. যে ট্রেড করেছেন তার দাম বাড়বে না কমবে তার সম্পর্কে ধারণা রাখা;
০২. কিভাবে ট্রেডিং করবেন তার চার্ট বানিয়ে রাখা;
০৩. কী কারণে দামের হেরফের হতে পারে তার কারণ জেনে রাখা;
০৪. কতটুকু দাম বাড়তে বা কমতে পারে তার সম্পর্কে ধারণা থাকা এবং
০৫. ট্রেডটিতে কত লাভ বা লোকসান হলে তা বন্ধ করে দেবেন, তা নির্ধারণ করে রাখা।
মেটা ট্রেডার সফটওয়্যারের সাহায্যে কতটুকু লাভ হলে বা ক্ষতির দিকে কতটুকু মুভ করলে ট্রেড বন্ধ হয়ে যাবে, তা নির্ধারণ করে দেয়া যায়। এতে আপনাকে কমপিউটারের সামনে বসে তদারকি করতে হবে না, আপনার অনুপস্থিতিতেই আপনার নির্দেশ অনুযায়ী তা ট্রেড বন্ধ করে দেবে। এ পদ্ধতিকে টেক প্রফিট ও স্টপ লস বলে। এ ধরনের আরো অনেক কৌশল রয়েছে, যা কাজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জানা যাবে।
বাজার বিশ্লেষণ
ফরেক্সে ভালো ফল পেতে বাজার বিশ্লেষণের বিকল্প নেই। বাজার বিশ্লেষণ বা মার্কেট অ্যানালাইসিস তিন ধরনের। এগুলো হচ্ছে :
০১. ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস;
০২. টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস;
০৩. সেন্টিমেন্টাল অ্যানালাইসিস।
তবে প্রথম দুটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস হচ্ছে কোনো দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও রাজনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করে সেই দেশের মুদ্রার মান বাড়বে না কমবে, তা থেকে ধারণা করা। টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস হচ্ছে মুদ্রার অতীত দামের ওপর ভিত্তি করে বর্তমানে কোন অবস্থানে আছে এবং ভবিষ্যতে তার দাম বাড়বে না কমবে তা শনাক্ত করার পদ্ধতি। টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিসে চার্ট বা তালিকা অ্যানালাইসিস করতে হয় বেশ কয়েক দিন বা আরো বেশি সময়ের।
কাদের জন্য এ ফরেক্স?
যে কোনো পেশার ও বয়সের লোক ফরেক্স মার্কেটে আসার ক্ষমতা রাখেন, কিন্তু সফল হওয়ার জন্য এবং টিকে থাকার জন্য প্রয়োজন হবে বেশ কিছু অভিজ্ঞতা ও পড়াশোনার। পড়াশোনা বলতে বই-খাতা নিয়ে ২-১ বছর কোনো ব্যবসায়িক বিষয়ের ওপরে পড়তে হবে, তা কিন্তু নয়। ফরেক্সের সাথে সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলোর ব্যাপারে ভালো জ্ঞান রাখতে হবে, নিয়মিত মার্কেটের খোঁজ নিতে হবে, মার্কেট বিশ্লেষণ করার বেশ কিছু পদ্ধতি আছে তা জেনে সঠিকভাবে চর্চা ও প্রয়োগ করতে হবে, চোখ-কান সর্বদা খোলা রাখতে হবে, যারা ফরেক্স ব্যবসায় অগ্রগ্রামী ও সফল, তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে এবং তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে হবে ও সেই সাথে ইন্টারনেটে প্রচুর ঘাঁটাঘাঁটি করতে হবে ফরেক্স সম্পর্কে জ্ঞানের ভান্ডার আরো ভারি করার জন্য। সংক্ষেপে বলতে গেলে এটিই হচ্ছে ফরেক্সের পড়াশোনা। তবে সফল ফরেক্স ট্রেডার ও বড় বড় অর্থনৈতিক বোদ্ধার লেখা বেশ কিছু বইও আছে ফরেক্স সম্পর্কে। নিজের দক্ষতা আরো বাড়াতে চাইলে সেগুলো সংগ্রহ করে পড়ে দেখতে পারেন। সবাই ফরেক্সে কাজ করতে পারবেন বললেই তো আর সবার জন্য তা নয়। কিছুটা অগ্রাধিকার পাওয়ার মতো লোক তো থাকবেনই।
সেরকম কিছু ব্যক্তির কথা এখানে তুলে ধরা হলো :
০১. যারা ফুল টাইম জব করেন না এবং হাতে বেশ কিছু সময় থাকে, তারা আসতে পারেন এ পেশায়;
০২. যাদের ফুল টাইম জব রয়েছে, কিন্তু একটু বাড়তি ইনকাম হলে ভালো হয় তারাও আসতে পারেন। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে এখানেও কিন্তু সময় দিতে হবে;
০৩. শিক্ষিত, কিন্তু যাদের হাতে কাজ নেই এবং কাজও পাচ্ছেন না, তারা বেশ সময় পাবেন এ ব্যবসায় নিজের দক্ষতা প্রমাণে;
০৪. যাদের নতুন কিছু শেখার আগ্রহ আছে এবং এ লাইনে ভালো ফল পাওয়ার আশা রাখেন তারা;
০৫. শেয়ার মার্কেটের যারা ভালো-দক্ষ কিন্তু বাজারের মন্দাভাবের কারণে ভালো কাজ করতে পারেছেন না, তারা আসতে পারেন মন্দাবিহীন এ বাজারে;
০৬. গণিতে যারা ভালো তারাও যোগ দিতে পারেন। কারণ এ ব্যবসায় যে গণিত ভালো জানা লোকেরা বেশি বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারবেন;
০৭. যাদের ফিবোনাচ্চি ও এলিয়ট সম্পর্কে আগ্রহ আছে এবং এসব থিওরি কিভাবে টাকা উপার্জনে সাহায্য করতে পারে, তা জানার চেষ্টা করার জন্য এ বাজারে আসতে পারেন এবং
০৮. ঘরে বসে ইন্টারনেট থেকে আয় করতে চান যারা তারাও আসতে পারেন, তবে তারা ইংরেজিতে ভালো হলে তবেই মার্কেটে টিকে থাকতে পারবেন। কারণ, মার্কেট অ্যানালাইসিস করার জন্য অনেক খবর রাখতে হবে। সব খবর দেশী পত্রিকায় নাও থাকতে পারে, তাই বিদেশী পত্রিকা বা ইন্টারনেটে ইংরেজি নিউজ শুনে মার্কেট যাচাই করতে হতে পারে।
কাদের জন্য ফরেক্স নয়?
০১. যারা মনে করছেন সহজে টাকা কামানোর চিন্তা করছেন তারা;
০২. কাজ না করে হাত গুটিয়ে বসে বসে ফরেক্স থেকে টাকা কামাতে চান তারা;
০৩. কম কাজ করে বেশি লাভ পেতে চান যারা;
০৪. অল্প সময়ে বড়লোক হওয়ার চিন্তা যাদের তারা;
০৫. যাদের টেকনিক্যাল ও ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস এবং ফরেক্সের সাথে জড়িত শব্দগুলো সম্পর্কে ভালো জ্ঞান নেই তারা;
০৬. যারা অল্প সময় ডেমো ট্রেডিং করে মনে করছেন রিয়েল ট্রেডিংয়ে ভালো করবেন তারা ফরেক্স মার্কেটে বেশিদিন টিকতে পারবেন না। সফল ফরেক্স ট্রেডারেরা নতুনদের ১ বছর ডেমো ট্রেডিং করে ভালো ফল লাভ করার পর রিয়েল ফরেক্স ট্রেডিংয়ে আসার পরামর্শ দেন। এত সময় অপেক্ষা করতে না চাইলে অন্তত ১ মাস ডেমো ট্রেডিং না করে কেউ এ ব্যবসায় আসবেন না। ডেমো ট্রেডিংয়ে নিজের অবস্থান ভালো না থাকলে রিয়েল ট্রেডিংয়ে আসার কথা চিন্তা করাও বোকামি;
০৭. খুব কম সময়ে ফরেক্স শিখে কাজে নামতে চাচ্ছেন, তবে তা ভুলে যান, কারণ ফরেক্সে তাড়াহুড়া করে কোনো কাজ করলে ফল শূন্য পেতে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না এবং
০৮. ফরেক্স কোচিং করে নিজেকে ভালো ট্রেডার মনে করলে হবে না। থিওরি জানবেন ঠিক আছে, কিন্তু বাস্তবে কাজ না করে কোনোদিনই এ কাজে ভালো ফল আশা করা যায় না। ডেমো ট্রেডিংয়ে ফরেক্স ভালোভাবে চর্চা করে নিজের দক্ষতা যাচাই না করে ফরেক্সে আসার ভুল কখনই করবেন না।
ফরেক্স শিখবেন কিভাবে?
আমাদের দেশে ফরেক্স শেখার ভালো কোনো কোচিং বা প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি। ইন্টারনেটে ফোরাম, বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ব্লগগুলোতে নজর রাখলেই আপনার জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ হবে। আলাদা কোচিং করে টাকা ও সময় নষ্ট করার কোনো অর্থ হয় না। পত্রপত্রিকায় যেসব ফরেক্স শেখানোর বিজ্ঞাপন দেয়া হয়, সেগুলোর শিক্ষার মান কেমন, তা সঠিক করে বলা সম্ভব নয়। কারণ, ফরেক্স শেখার জন্য নিজেই নিজের শিক্ষক হতে হবে প্রথমে, মনেপ্রাণে পণ করতে হবে আপনি এ ব্যবসায় সফল হয়েই ছাড়বেন। এরপর লাগবে সঠিক দিকনির্দেশনা, এরপর ফরেক্স নিয়ে স্টাডি ও অ্যানালাইসিস, আরো লাগবে দক্ষ ট্রেডারদের সাথে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করা। সব শেষে থাকতে হবে কঠোর পরিশ্রম করার ও ধৈর্য ধরে রাখতে পারার মনোভাব। ফরেক্স শেখানোর জন্য বেশ কিছু বাংলা ওয়েবসাইট ও ব্লগ খুঁজলেই পাবেন। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে : www.bdpips.com ও www.outsourcingbd.com। বিডিপিপস বাংলাদেশের প্রথম ফরেক্স ফোরাম ও ফরেক্স স্কুল, যেখানে পর্যায়ক্রমে ফরেক্সের ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। ইংরেজি ওয়েবসাইটের মধ্যে ফরেক্স শেখার বেশ ভালো একটি সাইট হচ্ছে : www.babypips.com।
ফরেক্স অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম
এটি অনেকটা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার মতো ব্যাপার। ব্রোকার বাছাই করে তাদের কোম্পানিতে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় যে ফর্ম পাবেন তাতে আপনার নাম, ঠিকানা, বয়স, ই-মেইল অ্যাড্রেস, ফোন নাম্বারসহ আরো কিছু তথ্য দিতে হবে। কিছু ব্যতিক্রম ব্যাপারের মধ্যে রয়েছে :
০১. সোয়াপ (Swap) :
এটি হচ্ছে সুদ। বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হারের ওপরে ভিত্তি করে আপনার ট্রেডে আপনাকে সুদ দেয়া হবে বা আপনার কাছ থেকে নেয়া হবে। মুসলমানদের জন্য সুদ নেয়া বা দেয়া হারাম। তাই যারা সুদের কারবার করতে না চান তারা এ অপশন সিলেক্ট করবেন না।
০২. লেভারেজ :
আগেই বলা হয়েছে এ ব্যাপারে। কত অনুপাতে লোন নিতে চান, তা এখানে নির্ধারণ করে দিতে হয়। আপনার পুঁজি বেশি হলে লেভারেজ না নেয়াই ভালো। পুঁজি কম হলে লেভারেজ নিতে পারেন। তবে বেশি নেবেন না। ১:৫০-১:২০০-এর চেয়ে বেশি লেভারেজ নেয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
০৩. অ্যাকাউন্ট কারেন্সি :
কোন কারেন্সিতে আপনি অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করবেন তা সিলেক্ট করতে হবে। এখানে মার্কিন ডলার বা ইউএস ডলার সিলেক্ট করাটাই ভালো এবং
০৪. অ্যাকাউন্ট টাইপ :
আপনার পুঁজির ওপরে নির্ভর করবে আপনার অ্যাকাউন্টের আকার কিরকম হবে। এটি মাইক্রো, মিনি ও স্ট্যান্ডার্ড এ ধরনের ভাগে বিভক্ত থাকতে পারে।
কিছু অ্যাকাউন্ট শুধু মেইল ভেরিফিকেশনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। এরা ভেরিফাই করার জন্য আরো কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে। তাই আপনাকে আপনার পাসপোর্ট নাম্বার, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি এবং ঠিকানা ভেরিফিকেশন করার জন্য বিদ্যুৎ/গ্যাস/পানি বা মোবাইল/ ইন্টারনেটের বিল অথবা ব্যাংক স্টেটমেন্টের স্ক্যান করা কপিও দেয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন না করে ডিপোজিট করা উচিত নয়।
কাজ শুরু করবেন কিভাবে?
ফরেক্সের জগতে প্রবেশের জন্য আপনাকে প্রথমে ভালো দেখে একটি ব্রোকার কোম্পানিতে অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে হবে। তারপর তাতে কিছু অর্থ ডিপোজিট বা জমা করতে হবে। অনলাইনে অ্যাকাউন্ট খুব সহজেই খুলে ফেলতে পারবেন ব্রোকারের দেয়া ফর্ম পূরণের মাধ্যমে। ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ আপনি আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্ট যেমন : PayPal, Alert Pay, Liberty Reserve, Money Bookers, Neteller, WebMoney, Western Union, MoneyGram বা ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড থেকেও ডিপোজিট করতে পারেন। আপনার পুঁজি কিভাবে ডিপোজিট করবেন তা নির্ভর করে ব্রোকারের ওপরে, তারা কী ধরনের মানি ট্রান্সফার পদ্ধতি সাপোর্ট করে সে অনুযায়ী আপনাকে ডিপোজিট করতে হবে। ডিপোজিটের ব্যাপারে কী করতে হবে, তা ব্রোকারের সাইটে বিস্তারিত লেখা থাকে, তাই চিন্তার কোনো কারণ নেই। অ্যাকাউন্টে আপনার পুঁজি জমা হলেই আপনি সে অর্থ দিয়ে ট্রেড শুরু করতে পারবেন। ফরেক্সে ট্রেড করার জন্য ট্রেডিং সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হয়। ব্রোকারের সাইটেই এ ধরনের সফটওয়্যার দেয়া থাকে, যা আপনি বিনামূল্যে ডাউনলোড করে নিয়ে কাজ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে সফটওয়্যার ইনস্টল করার পর ব্রোকারের কাছ থেকে পাওয়া ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে তাতে লগইন করতে হবে। বেশিরভাগ ব্রোকার মেটাট্রেডার নামের একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকেন।
ডেমো ট্রেডিং
নতুনদের জন্য ডেমো ট্রেডিং অত্যাবশ্যক। ব্রোকারের সাইটে অ্যাকাউন্ট খোলার পর রিয়েল ট্রেডিং না করে আপনি ডেমো ট্রেডিং করার অপশন পাবেন। সেখানে তারা কিছু ভার্চুয়াল মানি দেবে আপনাকে ট্রেড করার জন্য। কিন্তু মার্কেটের ডাটা বা কারেন্সি এক্সচেঞ্জ রেট আসল হবে। আসল মার্কেটে নকল অর্থ ব্যবহার করে ট্রেড করতে হবে। ট্রেড করে আপনি কতটা লাভ বা লোকসান করেন তা পর্যালোচনা করলেই বুঝতে পারবেন ফরেক্সে আপনার দক্ষতা কতটুকু। ডেমো ট্রেডিংকে ফরেক্সে আপনার প্রাথমিক অভিজ্ঞতা বলতে পারেন। ফরেক্সে ভালো করতে চাইলে ২-৩ মাস ডেমো ট্রেডিং করুন এবং নিজের অবস্থান ভালো থাকলে তবেই রিয়েল ফরেক্স ট্রেডিংয়ে নামুন।
ডিপোজিট না করেই ট্রেড করার উপায়
যারা নতুন তারা ডেমো ট্রেডিং শেষে ডিপোজিট করতে অনেকেই সমস্যায় পড়েন। কারণ, তাদের ডিপোজিট ট্রান্সফার করার উপায় জানা থাকে না বা করতে পারেন না। এমন ট্রেডারদের জন্য কিছু ব্রোকার কোম্পানি বোনাস ডিপোজিটের ব্যবস্থা রেখেছে, যারা বিভিন্ন ধরনের বোনাস দিয়ে থাকে। বোনাস দেয়া ডিপোজিট উঠানো যাবে না, কিন্তু লাভ করা অর্থ উঠানো যাবে। নিচে এমন কিছু ব্রোকারের নাম ও বোনাসের পরিমাণ দেয়া হলো :
লাইটফরেক্স (liteforeX.com)….. :........ ২০০ ডলার
পাক্সফরক্সে (paXforeX.com)…. :……১০০ ডলার
ট্রেডিং পয়েন্ট (trading-point.com):…...২৫ ডলার
রোবোফরেক্স (roboforeX.com)..:……...১৫ ডলার
নর্ডএফএক্স (nordfX.com) …… :…...…৮ ডলার
মার্কেটিভা (marketiva.com)…. :…...…৫ ডলার
ফরেক্সসেন্ট (foreXcent.com)… :…...…৫ ডলার
ফরেক্স মার্কেটের সুবিধা
ফরেক্স মার্কেটের সুবিধাগুলো হলো :
০১. শেয়ার মার্কেটে শুধু শেয়ারের দাম বাড়লেই লাভ করা সম্ভব কিন্তু ফরেক্স মুদ্রার দাম বাড়ুক বা কমুক তাও লাভ করা সম্ভব;
০২. মাত্র ১ ডলার পুঁজি নিয়েও ব্যবসায় শুরু করা যায়;
০৩. ডিপোজিট না করে কিছু ব্রোকারের দেয়া বোনাস মানি দিয়েও ব্যবসা শুরু করা যায়;
০৪. ভার্চুয়াল মানি দিয়ে ডেমো ট্রেডিং করে নিজেকে এ ব্যবসার উপযুক্ত করে গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে;
০৫. অনেক বড় অঙ্কের লোন বা লেভারেজ পাওয়া যায়;
০৬. খুব কম সময়ে ১৫-২০ সেকেন্ডের মধ্যেও বেশ ভালো লাভ করা সম্ভব;
০৭. ঘরে বসেই কাজ করা যায়;
০৮. কমপিউটার ও ইন্টারনেট কানেশন ছাড়া আর কিছু লাগে না;
০৯. তুলনামূলক কম সময় নষ্ট করে ভালো ইনকাম করা যায়;
১০. পৃথিবীর যেকোনো স্থানে বসে এ ব্যবসায় করা সম্ভব, যদি সেখানে ইন্টারনেট কানেকশন থাকে;
১১. স্টক মার্কেটের চেয়ে বেশি মার্কেট লিকুইডিটি বিদ্যমান;
১২. সফটওয়্যার পরিচালনা ও অন্যান্য বিষয় একবার বুঝে নিলে তা কঠিন মনে হবে না;
১৩. মার্কেটের আকার এত বিশাল যে ব্যক্তিগতভাবে বা কোনো গোষ্ঠী তাতে প্রভাব ফেলতে পারবে না;
১৪. এ বাজারে মন্দা বলতে কিছু নেই;
১৫. কেনাবেচার জন্য কাউকে কোনো কমিশন দিতে হবে না এবং
১৬. স্বাধীনভাবে কাজ করা যাবে।
ফরেক্স ট্রেডিংয়ের অসুবিধা
সবকিছুরই ভালো-মন্দ দুটি দিক রয়েছে। তেমনি ফরেক্সে ব্যবসায়ের সুবিধার পাশে কিছু সমস্যার মধ্যে রয়েছে :
০১. প্রফেশনাল ট্রেডারদের সাহায্য ও পরামর্শ লাগে সবসময়;
০২. নিয়মিত মার্কেট মনিটরিং করতে হয়;
০৩. বেশ ভালো স্টাডি ও অ্যানালাইসিস করতে হয়;
০৪. নতুনদের জন্য বেশ রিস্কি;
০৫. ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে, তাই অনেক ট্রেডার সমস্যায় পড়েন;
০৬. ইন্টারনেটে অনেক ধোঁকাবাজ ব্রোকার রয়েছে যারা ডিপোজিট করা টাকা মেরে দেবে;
০৭. সবসময় সতর্ক থাকতে হয় কোনো ট্রেড করার পর এবং
০৮. প্রচুর শ্রম দিতে হবে ও অভিজ্ঞ হতে হবে।
শেষ কথা
ফরেক্স ব্যবসায়কে গাড়ি চালনার সাথে তুলনা করা যেতে পারে। যদি আপনি গাড়ি চালানোর মৌলিক ধারণা নিয়ে গাড়ি চালনা শুরু করেন, তবে আপনি গাড়ি চালাতে পারবেন ঠিকই। কিন্তু একসময় বিপদে আপনাকে পড়তেই হবে। গাড়ি ভালোভাবে না চালাতে জানলে হয় গিয়ে পড়বেন খাদে, না হয় অ্যাক্সিডেন্ট করে পড়ে থাকবেন হাসপাতালের বেডে। যদি গাড়ি ভালোভাবে হাতেকলমে চালানো শেখেন এবং রাস্তার সিগন্যাল ঠিকভাবে মেনে চলেন, তবে আপনি ভালো ড্রাইভার হতে পারবেন। ধীরে ধীরে আরো ভালো দক্ষতা অর্জন করলে আরো ভালো গাড়ি চালাতে পারবেন এবং যেকোনো মডেলের গাড়ি চালাতে পারবেন। ঠিক তেমনি ফরেক্স মার্কেটে মৌলিক ধারণা না নিয়ে রিয়েল ট্রেডিংয়ে নেমে গেলে সর্বনাশ হতে বেশি সময় লাগবে না। ডেমো ট্রেডিং করে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে এবং সবসময় দক্ষ ট্রেডারদের কাছ থেকে সাহায্য নিতে হবে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে হবে এবং বেশি লোভ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যথাসম্ভব কম রিস্ক নিয়ে ট্রেড করতে হবে। দক্ষ ট্রেডারদের মতে ১-২% ঝুঁকি নিয়ে ট্রেড করা উচিত। ফরেক্সে যারা নতুন তাদের বেশিরভাগই প্রায় ৯৫% ক্ষতির মুখোমুখি হন এবং মাত্র ৫% সফলতা লাভ করেন। এর কারণ হচ্ছে ৫% ট্রেডার ভালোভাবে মার্কেট অ্যানালাইসিস করে তারপর কাজে নামেন আর বাকিরা তা করেন না। ফরেক্সে কাজ করার সময় বেশ সতর্ক থাকতে হবে। তা না হলে অনেক ক্ষতি হতে পারে। ফরেক্স বেশ ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু কিছু উপায় মেনে চললে তা তেমন একটা কঠিন বা ঝামেলার মনে হবে না। যত বেশি জ্ঞান আহরণ করতে পারবেন, ততই সাফল্য লাভ করতে পারবেন। তাই ফরেক্সের জগতে আসার আগে নিজেকে ভালো করে তৈরি করে নিন।
No comments:
Post a Comment